যেমন ঈমান হবে (আল্লাহর প্রতি) তেমন ধারনা হবে, ঐ ঈমানকে আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত (ঈমানদারের) ঈমান হিসেবে যাচাই করে দেখবেন ।
আবু দারদা রা. কে মানুষ এসে বললো যে, হে আবু দারদা! তোমার ঘর তো জ্বলে গিয়েছে ! জবাবে তিনি বললেন যে, না ! আমি ইহা বিশ্বাস করতে পারি না ! মানুষ বললো, আমরা তো দেখে এসেছি (জ্বলে গিয়েছে!), তিনি বললেন যে, না না, তোমাদের দেখা ভুল হতে পারে কিন্তু আমার শুনা খবর ভুল হতে পারে না ! আমাকে তো (রাসুলুল্লাহ সা. হতে) দোয়া জানায় দেওয়া হয়েছে, যে দোয়া জানানো হয়েছে, (আরবী) আমি তো সেই দোয়া পড়েছি, ইহা হতেই পারে না যে, আল্লাহ তা’আলা একদিকে আমার কাছে খবর পৌছালেন যে, তোমার উপর কোন মুসিবত আসতে দিব না, এবং আমাকে এই দোয়াও বলে দেন আর অপরদিকে আল্লাহ আমার ঘর জ¦ালিয়ে দিবেন ! ইহা হতে পারে না।
ইহা হবে না যে, আল্লাহ একদিকে আমার সাথে অঙ্গীকার করেন আর অপরদিকে আমার ঘর জ্বালিয়ে দেন, ইহা হবে না।
আমি তো আমার রবের সাথে ভালো ধারনা রাখি, একজন আসলো, দ্বিতীয়জন আসলো, তৃতীয়জন আসলো অতঃপর একব্যক্তি এসে বললো যে, আগুন তো লেগেছিলো তবে তা তোমার ঘরের কাছে এসে নিভে গিয়েছে !
আমার ভাই, বুযুর্গ ও দোস্ত ! দেখুন, বর্তমানে উম্মতের মধ্যে এককভাবে, সার্বিকভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে যে হালত (পরিস্থিতি) বিদ্যমান, সেসব কিছুর মৌলিক কারন ইহা যে, আমরা আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারনা পোষনকারী হয়ে গিয়েছি, আর সেই খারাপ ধারনাটা এই যে, (আমাদের ধারনা) পূর্বে যা যা হয়ে গিয়েছে তা এখন কিভাবে সম্ভব ?!
তাই আমি বলছিলাম যে, সাহাবায় কেরামগনের রা. সাথে আল্লাহ তা’আলার গায়েবী সাহায্যের ঘটনাগুলো খুইব বেশি বেশি করে বয়ান করুন, লক্ষ রাখবেন যে, হযরতজ্বী (ইউসুফ সাব রহ.) হায়াতুস সাহাবার শেষের দিকে গায়েবী সাহায্যের ঘটনাসমূহ একত্রিত করেছেন, সাহাবায় কেরামের সঙ্গে আল্লাহ তা’আলার গায়েবী মদদ আর সাহায্যের ঘটনা , সেসব ঘটনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়–ন এবং দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে তা বয়ান করুন,
আল্লাহ তা’আলা আজও তার থেকে কয়েকগুন বেশি সাহায্য করতে পারেন যা, আল্লাহ তা’আলা আম্বিয়া কেরাম এবং সাহাবায় কেরামের সাথে করেছেন,
ঈমানকে শিক্ষা করার এবং তাকে শক্তিশালী করার একটি মাধ্যম এই যে, ঈমান কে ঈমানের আলামতের সাথে বয়ান করুন,
(কি আর বলবো !) আমাদের মধ্যে ঈমানের দাবী পয়দা হয়ে গিয়েছে ! (অথচ, এর বাস্তবতা সম্পর্কে বেখবর)
কেননা, ইহা কি সম্ভব নাকি যে, (কোন ব্যক্তি) এমন বিষয়ের দাবীদার হয়, যে বিষয়ের হাকীকত (বাস্তবতা,যথার্ততা) সম্পর্কে তার খবর নাই !
ঈমানের হাকীকত এবং এর আলামত (নিদর্শন) রয়েছে, হাদীসে প্রচূর (আলামত) রয়েছে, বরং ঈমানের যতগুলো শাখা রয়েছে, ঈমানের যতগুলো শাখা রয়েছে, তার প্রত্যেকটাকে ঈমানের সাথে বয়ান করা হয়েছে, পাক পবিত্রতা ঈমানেরই অংশ, লজ্জা ঈমানেরই অংশ, এলেমের আগ্রহ হওয়া ঈমান থাকার প্রমান ,
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের নিকট ইয়ামান হতে জামাত আসলো, তিনি তাদের বললেন, (আরবী) প্রথমবার জামাত এসেছে আর নবীজী বলছেন যে, ঈমান ইয়ামান বাসীদের ! কারন, নবীজী তাদের কে জিঞ্জেস করেছেন যে, কি উদ্দেশ্যে এসেছো ? তারা বললেন, আমরা তো এলেম অন্বেষনে এসেছি। এলেম অন্বেষন, লজ্জা এসব ঈমানের শাখা।
তাই আমি বলছিলাম যে, ঈমানের দাবী উম্মত করছে তবে ঈমানের দাওয়াত উম্মতের মধ্য হতে বের হয়ে গিয়েছে !
এখন তো কেউ কেউ এমনও বলেন যে, ঈমানের জন্য হাদীসের কি প্রয়োজন কি ?!
আর এর (ঈমানের দাওয়াত/মেহনত) হকদার (প্রাপক) অন্যকে মনে করা সবচেয়ে বড় মূর্খতা ! অথচ, আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং বলছেন যে, (আরবী) ঈমানদার এই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাহ এর বেশি থেকে বেশি হকদার ও প্রাপক।
ঈমান কে তার আলামতের (নিদর্শন) সাথে বয়ান করুন, এক সাহাবী কত সহজ একটি প্রশ্ন করেছেন, (আরবী) সাহাবীর প্রশ্ন ছিল যে, ঈমান কাকে বলে? নবীজী বললেন, (আরবী) “ যখন তোমাকে তোমার নেক কাজ খুশি করে এবং তোমার মন্দ কাজ তোমাকে পেরেশান করে, তখন তুমি বুঝে নিবে যে, তুমি মুমিন ” যদি আমি এবং আপনারা এই আলামতটাকে সামনে রাখি ও চিন্তা করি যে, কোন নেক কাজ করে নেওয়ার পর আমাদের অন্তর থেকে কোন খুশি ও আনন্দ উপলোব্ধি হয় ? আর যদি আমাদের দ্বারা কোন গুনাহ হয়ে যায়, তো তারপর আমাদের মধ্যে কোন পেরেশানির অবস্থা তৈরী হয় কিনা ?
আমার সম্মানিত বন্ধুগন ! “ আল্লাহ আমাকে মাফ করুন ” এই অবস্থা আমাদের মধ্যে খুঁজলে হয়তো পাওয়াও যাবে না !
প্রকৃত অবস্থা এই যে, গুনাহ করে বন্ধুদের অত্যান্ত আনন্দের সাথে জানায় যে, “ আরে জানো আমি তো অমুক কাজ টা করেছি !” এরপর আবার বলছে যে, আমি মুমিন ! আমার সম্মানিত বন্ধুগন ! ইহা তো হতেই পারে না যে, ঈমান ও আছে আর তাকওয়া (আল্লাহর ভয়) নেই ! ঈমান ও আছে কিন্তু নিজের গুনাহের কারনে পেরেশান হয় না ! ঈমান ও আছে কিন্তু কোন নেক কাজের ফলে আনন্দ উপলব্ধি করে না !
ঈমান কে তার মজবূত আলামতের সাথে বয়ান করুন, যাতে করে ঈমানের দাওয়াত কয়েকটি কথা ও মুখস্থ কিছু শব্দের মধ্যে থেকে না যায়। বরং ঈমানের দাওয়াত দ্বারা ঈমানদ্বারদের মধ্যে ঈমানের দূর্বলতা অনুভুত হয়। এবং আল্লাহ তা’আলার ওয়াদা (হাদীসে আছে) যে, যে ব্যক্তি ঈমান চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই ঈমান দান করবেন। কিন্তু ঈমান তো সেই চাইতে পারে যার ঈমানের ব্যাপারে সচেতনতা আছে ! সহীহ বর্ণনাতে আছে যে, (আরবী) যদি উম্মতের মধ্যে মূর্খতা এবং ঈমানের দূর্বলতার অনুভুতি তৈরী হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তাদের কে এলেম এবং ঈমান দান করবেন।
(কিন্তু এলেম এর আগ্রহ তো সেই করতে পারে যার ইহা অনুভুতি আছে যে,!) এলেম কি আর মূর্খতা কি ? আর ঈমানের আগ্রহ তো সে করতে পারে যে ইহা জানে যে, ঈমান কাকে বলে ? এইজন্য আমার সম্মানিত বন্ধুগন ! ঈমানকে ঈমানের আলামতের সাথে বয়ান করুন যে, ঈমানের আলামত কি ? ঈমানের সবচেয়ে প্রথম আলামত হলো তাকওয়া। দ্বাওয়াত দ্বারা কালেমার ইখলাস চাওয়া হয়, আর ইখলাস হলো এই যে, তা মুমিন ব্যক্তিকে হারাম থেকে বিরত রাখে। মুমিন কে হারাম থেকে বিরত রাখা ইহা কালেমার ইখলাস।
আমার প্রিয় বন্ধুগন আমরা একটু আন্দাজ করে দেখি যে, (আমাদের মধ্যে) সূদও আছে, মিথ্যাও আছে, গীবতও আছে ! সকল গুনাহ হচ্ছে, তারপরও আমরা মু’মিন ?
এক সাহাবী হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে গীবত (পরনিন্দা) হয়ে গেলো, নবীজী বললেন, (আরবী) তুমি কুরআনের সাথে খেলছো ?! সাহাবী বললেন যে, জ্বী না হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা তো উহার (কুরআনের) উপর ঈমান এনেছি। নবীজী বললেন, (আরবী) যে কুরআনের হারামকৃত বিষয়কে হালাল মনে করে সে কুরআনের উপর ঈমান রাখে না । কারন, এই যে, যে বা যারা কুরআনের হারামকৃত বিষয় কে হালাল সাব্যস্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত, তারা তো হালত (বাহ্যিক পরিস্থিতি) দেখে চলে। তারা তো হুকুম (আল্লাহর নাযিলকৃত খবর) অনুযায়ী চলে না।
তাদের চেষ্টা হলো “ হায়, যদি কুরআনে এই বিষয়কে হারাম না করে হালাল করা হইত তাহলে আমাদের সোসাইটিতে অমুক পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যেতো !” ধারনা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন গীবতকারী কে যে, “ সে কুরআনের উপর ঈমান রাখে না ” আর আমরা এর থেকে আরও আগে বেড়ে এই চেষ্টায় লেগে আছি যে, যদি কুরআনে এই বিষয়টি হালাল হইত তাহলে আমাদের সমাজের পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যেতো ! ”
“ আমার বুযুর্গ, দোস্ত ! ঈমানের আলামত হলো তাকওয়া এবং এই কথা “আল্লাহর শপথ” একদম সত্য যে, যে ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া থাকবে, হারাম বস্তু তার হজম হবে না ” এই কথা একদম সত্য যে, যে ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া থাকবে, হারাম বস্তু তার হজম হবে না ” ইহা ঈয়াকিনী কথা। ইহা হতেই পারে না যে, কোন ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া এবং ঈমান হয় আর সে (ঘটনাক্রমে) হারাম ভক্ষন করে ফেলে অথচ তার কোন অসন্তুষ্টি অনুভব হয়না ! ইহা হতেই পারে না।
ঈমান এর আলামত ই তো তাকওয়া, আল্লাহ তাআলা তো কালেমা কে সরাসরি “ তাকওয়ার কালেমা ” ই বলেছেন,
ইহা তাকওয়ার কালেমা। এজন্য ইহা চিন্তা করুন যে, (উদাহরণ স্বরূপ) আমি হারাম লোকমা খেয়েছি, আর আমার এই হারাম ভক্ষনের ফলে যদি কোন অস্থিরতা / অসন্তুষ্টি অনুভব না হয়, তাহলে আমার মধ্যে তাকওয়া কোথায় (বাকি) থাকলো !