রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
যে কোন কিছুতে সফল হতে বুদ্ধির প্রয়োজন, রাগ হলো বুদ্ধির প্রতিপক্ষ। তাই দয়াদর্শনের দৃষ্টিতে সফলতার প্রধান শত্রু হল রাগ। পাল্লার যেদিকে রাগ থাকে তার অপরদিকে থাকে বুদ্ধি। যখন রাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন বুদ্ধি কমতে থাকে। আবার যখন রাগ কমতে থাকে তখন বৃদ্ধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। মানুষ যখন কোন কাজ রাগম্বিত অবস্থায় করে তখন সে বৃদ্ধিহীনতার কারণে বেশি বেশি ভুল করে। ফলে রাগাম্বিত ব্যক্তির লাভ থেকে ক্ষতি হয় বেশি। মানুষ যখন রাগে কথা বলে তখন সে ভদ্রতার সীমা হারিয়ে যা মুখে আসে তা বলে।
রাগ মানুষের স্বাভাবিক একটি অনুভূতি এবং আবেগের নাম। রাগ যে অনুভূতি এবং আবেগের অংশ, সেই অংশ থেকে লোভ এবং যৌনতাও তৈরি হয়।
মানুষের রাগের সাথে লোভ ও কামের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই দেখা যায় যে মানুষের রাগ বেশি সেই মানুষের লোভ ও যৌনতা বেশি। রাগাম্বিত মানুষের প্রেম মূলত প্রেম নয়, যৌন মিশ্রিত আসক্তি। কারো যখন রাগ নিয়ন্ত্রিত হয় তখন ধীরে ধীরে লোভ ও কাম নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। রাগ, লোভ এবং যৌনতা হলো মানুষের মৌলিক অনুভূতি এবং আবেগ। তা থাকেই। কিন্তু এই অনুভূতি এবং আবেগ যখন মাত্র ছাড়িয়ে যায় তখন তার গুরুতর ক্ষতিকর পরিণতি তৈরি করতে পারে। অনুভূতি এবং আবেগ বিস্ফোরণ ঘটলে মানুষের ধ্বংস অনিবার্য। বেশিরভাগ সময় অতিরিক্ত রাগ, লোভ এবং যৌনতা মানুষকে পাগল বানিয়ে দেয়, নিজের কিংবা অন্যের ক্ষতি করার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের অবনতি ঘটায়, অন্যের কাছে অপ্রিয় করে তোলে রাগাম্বিত ব্যক্তিকে। শরীরেও এগুলোর খারাপ প্রভাব পড়ে। তাই সবাইকে রাগ থেকে দূরে থাকতে হবে। কেউ যখন বুঝবে সে রগে উত্তপ্ত, তখন নিজে নিজকে শীতল এবং স্থির করতে চেষ্টা করতে হবে। তা বললেই হবে না। এখানে সাধনার প্রয়োজন রয়েছে। যে পরিস্থিতি আপনাকে রাগিয়ে দেয় আপনি, সেই জায়গা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন, চলে যান অন্য কোনো জায়গায়। নিজের মনের ইতিবাচক চিন্তার দিকে লক্ষ করলে রাগকে কমানো সহজ হয়। আত্মসংযম বা রাগ নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা গুন। অর্জন করুন এই গুণটি, আর ভালো থাকুন।
রাগ কী? এটাতো আপনিও বুঝেন। তবে কেন হয়? সে ব্যপারে কিছূ বলা যায়- মানূষ যা চায় তার বিপরীত কিছু হলে তখনেই যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাই রাগ। আবার একটা কাজ করতে চাচ্ছি কিন্ত হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রেও রাগ হতে পারে। এটা সাভাবিক অবস্থা। তবে সামান্য বিষয়েও শুধু শুধু রেগে যাওয়া এটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে কোনো বংশগত বা মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। অনেক সময় সামান্য রাগের কারণে চিরকালের জন্য সম্পর্কে অবনতি ঘটতে পারে। এমনকি কারো জীবনের হুমকি হতে পারে। তাই রাগ অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো – যখন কোনো বিষয়ে কোনো ব্যাক্তির সাথে রাগ করবেন তখন তার ভালো গুণগুলো মনে করুন। রাগকে থামাতে চেষ্টা করুন।
যারা মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে রাগাম্বিত তারা একবার ভাবুন, তিনি হলেন ওলি ইবনে ওলি। তাঁর বংশের অধিকাংশই দ্বীনের পথে জান কোরবানকারি। তারা দ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন ইসলামের প্রথম যুগ থেকে। মাওলানা সাদ ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)এর বংশের লোক। হয়তো কেউ কেউ বলবেন নেতৃত্ব বংশগত নয়, যোগ্যতাগত। আমি বলবো যোগ্যতা অর্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম পরিবার, তাই এখানে বংশের গুরুত্ব অনেক। নেতৃত্বের জন্য অভিজ্ঞতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ তার জীবনের বেশিরভাগ অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজ পরিবার থেকে। এখানেও বংশগত একটি বিষয় রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বেশিরভাগ সফল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বংশগত। অতপর কিছু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে সেই ধারাবাহিক নেতৃত্বের সংস্পর্শে এবং কঠিন সাধনার মাধ্যমে। সংস্পর্শ ও সাধনায় প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্ব থেকে আবার কিছুদিন নেতৃত্ব চলে বংশগত। পৃথিবীর আদি থেকে এই পর্যন্ত ইতিহাস তাই বলে। তাই আমি মাওলানা সাদকে বংশগত কারণেও গুরুত্ব্ দিচ্ছি।
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি মাওলানা সাদ কান্ধলভি দু’জন মহান ব্যক্তিত্বের কাছে আধ্যাত্মিক সাধনা করেন। তারা হলেন, সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (র.) ও মুফতি ইফতিখারুল হাসান কান্ধলভি। মুফতি ইফতিখারুল হাসান কান্ধলভিকে আমি জানি না। তবে সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (র.)- কে ভাল করেই জানি। এমন এক মহান ব্যক্তির খলিফা এখানে একই একশ। আমি যখন জানলাম, মাওলানা সাদ সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (র.)-এর খলিফা তখনই আমার মন তাঁর পক্ষে এমনি চলে যায়। এমন ব্যক্তির খলিফা মোটেও ছোটকথা নয়। এখানে বংশ নয়, সাধনার ব্যাপার। মাওলানা সাদ যে একজন সাধক তা বুঝতে আর বাকি থাকলো না। সাধকরা অন্যদের থেকে ভুল কম করে। তবে অনেক মানুষ ভুলের উপর দাঁড়িয়ে সাধকদের কথা অনুভব করতে না পেরে ভুল ব্যাখ্যা করে।
আমি যখন জানলাম, মাওলানা সাদ সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (র.)-এর খলিফা তখনই আমার মন তাঁর পক্ষে এমনি চলে যায়। এমন ব্যক্তির খলিফা মোটেও ছোটকথা নয়। এখানে বংশ নয়, সাধনার ব্যাপার। মাওলানা সাদ যে একজন সাধক তা বুঝতে আর বাকি থাকলো না। সাধকরা অন্যদের থেকে ভুল কম করে। তবে অনেক মানুষ ভুলের উপর দাঁড়িয়ে সাধকদের কথা অনুভব করতে না পেরে ভুল ব্যাখ্যা করে।
এখন প্রশ্ন হলো আপনি কেন মাওলানা সাদ-এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে বিরত থাকবেন? কারণ একটাই, তিনি নিজে একজন সাধক ওলি এবং দ্বীনের নিবেদিত মুবাল্লিগ আর তাঁর পূর্ব পুরুষে অসংখ্য সাধক ওলির জন্ম হয়েছে।
যারা মাওলানা সাদকে ইহুদিও দালাল-বাতিলের গুপ্তচর, কুলাঙ্গার আর বদমায়েশ বলেন তাদের উদ্দেশ্যে ভারতের মাওলানা কলিম সিদ্দিকি বলেন, তোমরা কাকে ইহুদীদের দালাল , বাতিলের গুপ্তচর বলছ? কুলাঙ্গার আর বদমায়েশ বলছ! তিনি তো আমাদেরই সন্তান। আমাদেরই ভাই। হযরতজি ইলিয়াস (র.)-এর প্রপৌত্র, মাওলানা ইউসুফ কান্ধালভীর নাতি, শায়খুল হাদিস জাকারিয়া (র.)-এর মেয়ের ঘরের নাতি। হযরতজিএনামুল হাসান (র.) ভাগনে। আলী মিয়া নদভী (র.)-এর খলিফা। শাহরানপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সালমান সাহেবের জামাতা। যাদের দ্বারা আল্লাঔহ গোটা দুনিয়াতে দ্বীনের মকবুল কাজ নিয়েছেন। সর্বোপরি হযরত আবুবককর সিদ্দিক রা এর রক্তের মুবাল্লিগ আলেম তিনি।’
এই কথাগুলো ভাবলে হয়তো কারো কারো রাগ থামতে পারে। আবার যারা মাওলানা সাদের পক্ষের তারাও তাদের প্রতিপক্ষের দ্বীনের খিদমাতকে স্মরণ করে নিজেদের রাগকে থামাতে চেষ্টা করতে পারেন। উভয়গ্রুপের রাগ থামাটা এই মুহুর্তে খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে আলেম-উলামারা নিজেদের ইলমি শানকে রক্ষা করতে হবে। গালিগালি কিংবা মাস্তানি কথা আলেমদের শানের খেলাফ, তা তাদেরকে বুঝতে হবে। উভয়গ্রুপ শান্ত মাথায় ভাবুন এবং একটি সিদ্ধান্তে আসুন।