বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ মবনু | অতিথি লেখক তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম |জাহেদ আহমদ, তাঁর নিজের দাবী অনুযায়ি এক সময় সে আমাকে ভালবাসতো। কারণ মওদুদীর ভ্রান্ত আকিদার কারণে আমি জামায়াত বিরোধী। কিন্তু এখন তিনি আমাকে ভালবাসতে পারছেন না, কারণ আমি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর সাফাই গাই। তাঁর মতে মওদুদী যে ভুল করেছেন, একই ভুল করেছেন মাওলানা সাদ। তাঁর প্রশ্ন যে আকিদার কারণে আমি মওদুদীর বিরুদ্ধে, সেই আকিদা থাকার পরও আমি মাওলানা সাদ-এর পক্ষে কেন?
জাহেদ আহমদ তাঁর এই বক্তব্যে আমার নামের পাশাপাশি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ও সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ-এর নাম উল্লেখ করেছেন। আমি বাকি দুজনের বক্তব্য জানি না। মাওলানা সাদ প্রসঙ্গে ওদের সাথে আমার কোন যোগাযোগও নেই। আমি আমার পক্ষ থেকে জাহেদ আহমদকে বলতে চাই, জামায়াতের সাথে আমার শুধু আকিদাগত সংঘাত নয়। সংঘাত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তারা রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস গঠন করে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করার কারণেও।
প্রথমত আমি জানি না, সাদ সাহেব কোথায় কি ভুল করেছেন। এখন পর্যন্ত তার যে বক্তব্যগুলো আমাকে লিংক দেওয়া হয়েছে তা খন্ড খন্ড বক্তব্য, যা স্পষ্ট এডিট করা। ফেইসবুকে, ইউটুবে এডিট করা বক্তব্য আমি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস করতে পারিনা। কারণ, এখন অনেক কিছুই তৈরি করা যায়। যেভাবে গালাগালি আর প্রতিহিংসামূলক কথাবার্তা চলছে তাতে স্পষ্ট যে, কেউ কেউ এগুলো এডিট করে পোষ্ট দিচ্ছেন। তবে আল্লামা সৈয়দ সুলতান মনসুরপুরী প্রমূখের বরাতে জানতে পেরেছি মাওলানা সাদ কান্ধালবির উপর যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তিনি সেগুলো রুজু করেছেন। ভারতের আল্লামা সৈয়দ সুলতান মনসুরপুরী কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং সিলেটও দুতিনদিন ছিলেন। যাদের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত আলাপ হয়েছে তারা এবিষয়টি পূর্ণাঙ্গ ওয়াকিফহাল। মওদুদীর সাথে মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যবধান এখানেই মওদুদী তাঁর কথা রুজু করেননি, মাওলানা সাদ তাঁর কথা রুজু করেছেন।
বিজ্ঞরা অবগত আছেন, তাওবা করার পরও যারা হিংসাবশত অপবাদ দিতে থাকে ওদের কিয়ামত হয় সেই অপরাধের অপরাধি হিসাবে যা তওবাকারি করেছেলো। আমি তাহকিক করে কথা বলছি। তাই আমি আমার জায়গা থেকে সরতে পারছি না। জাহেদ আহমদ কিংবা আমার অন্যকোন বন্ধু আমার কথা বিশ্বাস না করলেও আমার কিছু করার নেই। এটা চাঁদের মাসআলার মতো। যে চাঁদ দেখে তার জন্য রোজা রাখা ফরজ। আমার সত্য আমাকে আলো দিচ্ছে। হতে পারে অন্যের কাছে তা খবর।
জাহেদ আহমদ আমার বক্তব্যের উত্তরে বললো, ভাই তিনি এযাবত চার বার রুজু করেছেন। কিন্ত ঘুরেফিরে পুর্বের উল্টাপাল্টা বয়ান আবারও করছেন। আমিও তাহকিক করেছি। তবে সুন্দর সমাধান টানছেন, চাঁদের মাসআলার ন্যায়। সুতরাং আপনি আপনার কথায় থাকুন। আমরাও আমাদের কথায় থাকি। যখন চাঁদ দেখব, তখন রোজা রাখব। ভালো থাকুন। আমি বললাম, ভাই জাহেদ আহমদ আপনার সাথে আমি সহমত। তবে গালাগালি ভাল নয় এবং ভদ্রলোকরা গালাগালি করে না। হযরত রাসুল (স.) আবু জেহেলকেও গালি দেননি। আপনি আপনার বন্ধুদেরকে বলুন তারা যেন মাওলানা সাদ সাহেবকে গালি না দেয়। জাহেদ আহমদের জবাব হলো, স্যারি, ভাই!
গালাগালি ঠেলাঠেলি আমার মোটেও পছন্দ না। কিন্ত ক’জনকে বারন করা যাবে! আমি বললাম, সাদ সাহেবের যে বক্তব্যগুলো প্রচার করা হচ্ছে তা আগের। আল্লামা সালমান মনসুরপুরীর মতে তিনি রুজু করার পর এমন বক্তব্য আর দেননি। জাহেদ আহমদ বয়সে আমার ছোট হবে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে আমি চিনি না। তবে তাঁর ভালবাসাপূর্ণ প্রতিবাদকে শ্রদ্ধা জানাই এবং এই প্রেমকে আমি কোনদিন ভাঙতে চাই না। আই লাভ ইউ জাহেদ।
আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বড়ভাই মাওলানা সৈয়দ সালিম আহমদ, যিনি সৌদি আরব থাকেন। তিনি জাহেদ আহমদের পোষ্টে এসে বললেন, এই তিনজনকে আল্লাহ যে মেধা দান করেছেন স্রোতের উল্টো না চলে তাঁরা সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারতেন। ভাই সৈয়দ মবনু সম্বন্ধে যতটুকু জানি, তিনি বাকী দুজন থেকে ভিন্ন, ভয় ভীতি প্রলোভন ও দালালি স্বভাবের উর্ধ্বে পিতার মত যা সত্য মনে করেন তা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন না। বাকী দুই বুজুর্গের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারছিনা ।
শ্রদ্ধেয় বড়ভাই মাওলানা সৈয়দ সালিম আহমদকে ধন্যবাদ তিনি আমার সম্পর্কে সুধারণা রাখার জন্য। ধন্যবাদ জাহেদ আহমদকে সে সালিম ভাইয়ের সাথে সহমত প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু সালিম ভাইকে একটা কথা না বললে হয় না, ভাই সত্য যদি স্রোতের উল্টো থাকে তবে আমি কি করবো, আপনি বলুন? যুগযুগে যত আলেম নির্যাতীত হয়েছেন তারা কাদের সংঘবদ্ধ মিথ্যাচারের কারণে হয়েছেন, একটু ইতিহাসের পাতায় দেখলে খুশি হবো। আপনি জ্ঞানি মানুষ, আপনাকে অতিরিক্ত বলতে হবে না।
মুফতি মনসুর আহমদ, যিনি জামিআ সিদ্দিকিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল। তিনি জাহেদ আহমদের পোষ্টে এসে বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি তাবলিগ জামাত একটি আন্তর্জাতিক দাওয়াতি মিশন। এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং পাক ভারত উপমহাদেশের সচেতন উলামায়ে কিরামদের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমিও মুফতি সাহেবের সাথে সহমত প্রকাশ করছি।
আমার বন্ধু খাতিব তাজুল ইসলাম, থাকেন লন্ডনে। তিনি জাহেদ আহমদের পোষ্টে এসে বলেন, ইদানিং লন্ডনে তিনি এরশাদ করেছেন: ওহুদের যুদ্ধে কতক সাহাবা রাসুলের নাফরমানি করেছেন বিধায় বিপদ ঘনিয়ে আসে।’ আপনি রি ব্যাখ্যা দিবেন জনাব?
আমার বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো, আমি এই বক্তব্য শোনেছি। ভাই, যেকোন বক্তব্যের মুটিভ না বুঝলে তার সঠিক অর্থ উঠে আসে না। প্রথমত এখানে মুটিভ ছিলো আনুগত্যের গুরুত্ব বুঝানো। আপনি তো ইংল্যান্ড থাকেন। উর্দু ভাষাও বুঝেন। বাংলাভাষায় নাফরমানি যে মুটিভে বলা হয়, উর্দুভাষায় সেই মুটিভে নয়। বাংলাভাষায় নাফরমানি শব্দ নিয়ে পাপ বুঝালেও উর্দু ভাষায় কথা অমান্যকে ‘নাফরমানি’ বলে। স্থান, কাল, পাত্র বিশেষ শব্দের অর্থ ভিন্ন হতে পারে। যেমন উর্দু এবং হিন্দিতে চুল বলে নাভির নীচের চুলকে এবং ‘বাল’ বলে মাথার চুলকে। বাংলাভাষায় নাভির নীচের চুলকে ‘বাল’ বলে এবং মাথার চুলকে চুল বলে। কোন উর্দুওয়ালা সেলুনে গিয়ে যদি কেউ বলে ‘চুল কাটআনা’ কিংবা কোন বাংগালি সেলুনে যদি গিয়ে বলে ‘বাল’ কাটতে এসেছি তবে পূর্ণাঙ্গ মারামারি হয়ে যেতে পারে। ভাই, এখানে নাফরমানি শব্দ দিয়ে এই সংঘাত তৈরি হয়েছে।