শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম | দেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সম্প্রতি সারাদেশে হেফাজত সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে তাবলীগের মূলধারা থেকে বিচ্যুত সাবেক আহলে শুরা মাওলানা ক্বারী জুবায়ের তাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তার ঘনিষ্ট কয়েকজন হেফাজত নেতার ধানের শীষের টিকেটে নির্বাচনের ফলে এখন বাজারে আলোচিত হচ্ছে নানান মতামত ও মন্তব্য।
তার ঘনিষ্ট বন্ধু ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা, (যে দুজন মিলেই মূলত পাকিস্তান সফর করে এসে বাংলাদেশে তাবলীগ বিরোধী সংকট তৈরি করেন) মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয় হলে জুবায়েরর অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে বলে তার ঘনিষ্টরা মনে করছেন। ফলে উবায়দুল্লাহ ফারুকের নির্বয়চনী এলাকায় জুবায়ের সমর্থক তাবলীগের সাথীদের নিবার্চনী মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে তারা নিয়মিত ফোন করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষক মহল মনে করছেন, তাবলীগকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে বাংলাদেশে ব্যাবহার ও হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অপচেষ্টার মূলহোতাই হলেন ওবায়দুল্লাহ ফারুক ও মাওলানা জুবায়ের। মাওলানা জুবায়ের এর আগে অন্তত ২০বছর বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ । কান্ধলভীর বয়ানের বাংলা তরজমা করেন। ততোদিন একটি ভুলও তিনি তার বয়ান থেকে ধরেন নি। হঠাৎ করে হেফাজত ইসলামের সাথে মিশে তাবলীগকে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে কোমর বেধে মাঠে নামেন। তার উচ্চাবিলাশী ক্ষমতা আকড়ে ধরার চক্রান্ত সাধারণ তাবলীগের সাথীদের কাছে চরমভাবে ব্যার্থ হলে, তিনি হেফাজতের পাশাপাশি বেফাক ও কওমী মাদরাসার ছাত্রদের ব্যাবহার করে সারাদেশে ওজাহাতি সমাবেশ করতে থাকেন। তিনি গত ১১মাসে সারাদেশে হেফাজত নেতাদের নিয়ে অন্তত দুই শতাধিক ওজাহাতি সমাবেশ করেন।
গত ২ডিসেম্বর তাবলীগের শূরাদের চিরচেনা রক্ষণশীলতা সাংবাদিক সম্মেলন ও মিডিয়ায় টিভি ক্যামেরার সামনে বিফিং এর নিয়ম ভেঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের মতোই তিনি প্রেসবিফিং করেন। তার আরেক সহকর্মী মাওলানা ওমর ফারুকসহ হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে তিনি এই সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সাংবাদিকদের নানান প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের ডিগবাজ নেতা জুনাইদ আল হাবিব কিংবা মুফতী ফয়জুল্লার মতো মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে গোটা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিস্মিত ও হতাশ করেন।
এতে করে হেফাজতের প্রতি তার ঝুক ও ঘনিষ্ঠতা নতুন করে সর্ব মহলে আলোচনা চলছে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় বলয়ের হেফাজত নেতাদের রাজনৈতিক শোডাউনের মতোই তাবলীগের নামে এসব সমাবেশ ছিল মাওলানা জুবায়েরকে কেন্দ্র করেই। মাঠে ময়দানে বিপর্যস্ত হেফাজতের সামনে নির্বাচনের আগে তাদের শক্তি প্রদর্শনে আর কোন ইস্যু ছিল না। কেউ কেউ এই শক্তি দেখিয়ে নানান জোটে যোগদান ও নমিনেশনের জোর চেষ্টা করেন। আওমী লীগ ও জাতীয় পার্টির বলয়ে আস্থাহীন এই আলেমরা এনির্বাচনে তেমন কোন সুবিধা করতে না পারলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফন্ট থেকে জামাত লবিং এর কারনে মাওলানা সাদ বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যের মূল কারিগর, ক্বারী জুবায়েরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সহ কয়েকজন শীর্ষনেতা ধানের শীষ প্রতীকে নমিনেশন পেয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, বর্তমান সরকার বিরোধী বিএনপি জামাত বলয়কে শক্তিশালী করতেই মূলত পাকিস্তানপন্থী মাওলানা জুবায়েরকে দিয়ে হেফাজতের বড় একটি অংশ তাবলীগ নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তারা এক্ষেত্রে জুবায়েরকে হাত করে ওজাহাতি শক্তি দেখিয়ে নিজেদের নমিনেশন টিকেটকে অনেকটা নিশ্চিত করতে পেরেছে। গত কয়েকদিন আগে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ তাবলীগের সংঘাতে তৃতীয় শক্তির কথা বলেছেন। তিনি গত রবিবার সরাসরি এর সাথে পাকিস্তান ও জামাতে ইসলামীর সম্পর্কের কথা বিস্তারিত তুলে ধরেন।
বিষয়টি গত দুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পাকিস্তান শুরাপন্থী তাবলীগের মুরুব্বী, ক্বারী জুবায়েরের শ্যালক ও ডান হাত বলে খ্যাত কাকরাইল মাদরাসার সিনিয়র উস্তাদ মাওলানা আবু ওবায়দার ফোনালাপ থেকে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। ফোনালাপে বর্তমান সরকারের সাথে অভ্যাম্তরিন দূরত্ব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দোষারোপসহ তাদের নানান পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে পরে। বিদেশ থেকে চলমান সংকটের নামে টাকা কালেকশন করতেও শুনা যায় এই ফোনকলে। (এই প্রতিবেদনটির নিচে ফোনালাপটি সংযুক্ত আছে।)
এর কয়েকদিন আগে মাওলানা জুবায়েরর পুত্র হাফেজ হানজালা সরাসরি ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে সরকারের ঘনিষ্ট একজন আলেম ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নিয়ে দরবারী আলেম বলে গালিগালাজ করেন। সব কিছু মিলিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে নানান স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করলেও সরকার বিরোধী বলয়ের খপ্পরেই জুবেয়েরর বলয় কাজ করছে। তারাই মূলত চাচ্ছে তিনি যেন হেফাজতের সাথে আরো ঘনিষ্ট হয়ে কাজ করতে পারেন।