শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
বীর মুক্তিযোদ্ধা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মসাঊদ | আজ থেকে আটচল্লিশ বছর আগে এই বাংলার দামাল ছেলেরা, কিষাণ-কিষাণীরা ছাত্রযুবক মেহনতী মানুষেরা এক দারুণ আবেগে ফুঁসে উঠেছিল। সাগর সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এই দিনে। স্বাধীনতার লাল সূর্যটা হেসে উঠেছিল বিজয়গর্বে। কিষাণী ভেবেছিল তার গোয়ালে দুধের গাই আসবে, কিষাণ মনে করেছিল সোনালী ধানে আবার তার উঠান ভরে উঠবে। গাঁয়ের নতুন বউ আশায় ছিল রেশমী চূড়ীর রিণ-রিণীতে ভরে উঠবে মন, মধুর সুরে বাজবে মন। মেহনতিরা স্বপন দেখেছিল তাদের শ্রমের ফসল তার ঘরে তুলতে পারবে। জুলুমের দিন আজ শেষ।
কিন্তু, কিন্তু আজ আমরা কি দেখছি? সমীরণের গায়ে কি কাপড় উঠেছে। শরফত আলীর পেটে কি দু’বেলা ভাত জুটছে? শবমেহেরদের কি ইজ্জতের জন্য আর লাশ হতে হচ্ছে না? কেন এমন হলো? কে এর জন্য দোষী? কেমন করে অন্যের স্বপ্নেরা সব হারিয়ে গেল নিকষ আঁধারে?
দোষী আমি, আপনি আমাদের সমাজ। আমাদের সিস্টেম। স্বাধীনতা অর্জন কঠিন বটে কিন্তু এর সুফল ঘরে তোলা তো আরও কঠিন। সর্বত্র যেখানে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মার খাচ্ছে চরমভাবে সেখানে সুখী সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব কেমন করে? আমরা আজ সবাই সবার হাতে মার খাচ্ছি প্রত্যেকের দিকে দিকে। ক্রেতা শোষিত হচ্ছে খুচরা বিক্রেতার কাছে, খুচরা বিক্রেতা শোষিত হচ্ছে প্রশাসন যন্ত্রের কাছে, প্রশাসন যন্ত্রের সদস্যরা আবার শোসিত হচ্ছে ক্রেতা হিসেবে। সর্বত্রই শোষণের রাজত্ব।
এর বিপরীত আমরা একটা সমাজের চিত্র আঁকতে পারি। সেখানে রাষ্ট্রপ্রধানকেও একজন মানুষের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারেন না। সমাজের সব সদস্যের জন্য চা-পাতি রুটির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলে নিজে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। সমাজের একজন সাধারণ মহিলাও আল্লাহর কাছে জবাবদেহি করার চেতনায় এতটুকু উদ্বুদ্ধ যে অপর কেউ দেখতে না পেলে কি হবে, আল্লাহতো দেখছেন বলে দুধে পানি মিশানো থেকে বিরত থাকছেন। জানমালের নিরাপত্তা খাওয়াপড়া ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা যেখানে সবার পাওনা ছিল। অথচ এরাই কিছুদিন আগে ছিল প্রতারক ও দুর্নীতির শিকার। কেমন করে সম্ভব হয়েছিল তা। হ্যাঁ, সে ছিল একটি ব্যবস্থা যা গোটা সমাজ ও সমাজ সদস্যদের আমূল বদলে দিয়েছিল।
সে ব্যবস্থাটির নাম হচ্ছে ইসলাম। আর এই ইসলামের মধ্যেই কেবল সেই সঞ্জিবনী শক্তি বিদ্যমান যা রুগ্ণ ও মুমূর্ষ সমাজকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে। প্রত্যেক যুগের চন্দ্র ও সূর্য মাটি ও বাতাস বার বার প্রত্যক্ষ করছে এই সত্যটিকে। সুতরাং আমাদেরকেও যদি কাঙ্ক্ষিত স্বর্গে পৌঁছুতে হয়। লালিত স্বপ্ন ও বাস্তব করতে হয় তবে সেই নববী কাঠামোতেই ফিরে আসতে হবে আমাদের। দুসরা কোনো পথ পৃথিবী দেখেনি, আর দেখবেও না কখনো। সুতরাং এই বিজয় দিবসকে ফলপ্রসূ করতে হবে।
সুতরাং আজ আমাদের অঙ্গীকার হোক সেই সিস্টেমে ফিরে যাওয়ার, সেই কাঠামোর রূপায়ণের। নইলে যে উপায় নেই।
লেখক : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম।