বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১, ০২:৪১ অপরাহ্ন
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ, দিল্লী থেকে, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম | গতকাল মাওলানা ইলিয়াস রহ এর বাড়ি কান্ধালায় গিয়েছিলাম, তারই খান্দানের আরেক জিবন্ত কিংবদন্তিকে দেখতে। ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে ও আযাদী আন্দোলনে ১৮৫৭সাল নিয়ে ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখায় কান্ধালার এই মনীষীর লেখালেখির সাথে পরিচিত অনেকদিন ধরে। কেবল কান্ধালা দেখতেই নয় বরং ভারতবর্ষের ইতিহাসবিদ নূরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভীর সান্নিধ্য লাভ করতে এবার সেখানে গিয়েছিলাম। যাকে বলা হয় বর্তমান সময়ের মুয়াররিখুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের ইতিহাসবিদ।
আমার আজকের আলোচিত মনীষী, তারিখ, উলুমে হাদীস ও ফিক্বহে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী । তার পৈত্রিক নিবাস হিন্দুস্তানের উত্তর প্রদেশের মুজাফফার নগর জেলার কান্ধলায়। মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর বাড়িতেই তার বসবাস। উনার পিতা প্রবীন বুজুর্গ,ওয়ালিউল্লাহ বাগানের শতবর্ষী মনীষা, হযরত আব্দুল কাদির রায়পুরী রহ এর একমাত্র জীবিত খলিফা মাওলানা ইফতিখারুল হাসান কান্ধলভি হাফিযাহুল্লাহ। (যিনি হযরতজী মাওলানা সাদ সাহেবকে খেলাফতি দিয়েছেন)
মুয়াররিখুল হিন্দ নূরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভীর ১০০ এর ওপর কিতাব লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন। যার মধ্যে ৩৭ টি আরবিতে লেখা। তিনি পড়ালেখা করেছেন তার চাচা শায়খুল হাদিস মাওলানা যাকারিয়া রহ. এর কাছে মাজাহিরুল উলুম সাহারাহানপুর মাদ্রসায়। উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন হজরতজী মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভি রহ. এর সাথে।
জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন তার উস্তাদ এবং প্রিয় মুরুব্বি, সাহারহানপুর মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস, উস্তাজ ওয়া আরব ওয়া আজম হজরত শায়খ ইউনুস জৌনপুরী রহিমাহুল্লাহর সাথে।
তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে আছে ৭০হাজারের বেশি কিতাব এবং ১১০০০ এর বেশি বিভিন্ন কিতাবের পান্ডুলিপি রয়েছে। এই দুর্লভ গ্রন্থাশালা দেখার জন্যই বেশ কয়েকবার ভারতে আসার নিয়ত করেছিলাম।
উপমহাদেশে ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে এত বড় লাইব্রেরী দ্বীতিয় আরেকটি নেই। মন চাচ্ছিল, এই কিতাবগুলো হাতানোর জন্য যদি এখানে পড়ে থাকার সৌভাগ্য হত। আমাদের হযরতজী মাওলানা সাদ কান্ধলভী দা.বা সাপ্তাহে একবার কান্ধালায় আসেন কেবল এই কুতুবখানায় কিতাব মুতআলা (অধ্যায়ন) করার জন্য।
মাওলানা নূরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভীর লেখা বিখ্যাত কিতাবের মধ্যে ‘আহলে রেওয়াতে বুখারি’,’আহলে উলামায়ে হানাফিয়্যা। ‘ সহী বোখারীর মূল হাতে লেখা পান্ডুলিপি সহ ৬ষ্ট শতাব্দী থেকে সারা দুনিয়ার বহু ইতিহাসবিদ, হাদীস বিশারদ ও ফকীহদের হাতে লেখা পান্ডুলিপি এখানে আছে। যেসব কিতাবের দ্বীতিয় কপি পৃথিবীর আর কোথাও নেই । উপমহাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে বর্তমানে বেশ চমৎকার ও প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ‘আহওয়াল ও আসার’-গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধের একটি বিরল প্রকাশনা।
স্বয়ং মুফতী তাক্বী উসমানী সাহেব হাফিযাহুল্লাহ তাঁর পান্ডিত্য ও মাকতাবা দেখে নিজ সফর নামায় লিখেছিলেন “হিন্দুস্তান সফরে উনার মাকতাবার মত সবধরণের কিতাবের দ্বারা সমৃদ্ধশীল এমন মাকতাবা আমি আর কোথাও দেখি নাই” ৷
আরব আজম, ইউরোপ, রাশিয়া’র পন্ডিত গবেষকরা তাদের নিজেদের এলেমের চার্চ দিতে বহুপথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসেন তাঁর কাছে আাসেন। দারুল উলুৃম দেওবন্দের বর্তমান শায়খুল হাদীস সাঈদ আহমদ পালনপুরী ছাত্রদেরকে ক্লাসে প্রায়ই বলেন, তোমরা এই জামানায় যদি কোন আহলে এলেমকে দেখতে চাও তাহলে নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভীকে দেখে আসবে। আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী মিয়া নদভী রহ লিখেছেন, আমি নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভীর মতো কোন বড় পন্ডিত্যের দেখা আমার জামানাতে আমি পাইনি।
বাংলাদেশের অন্যতম মুফতী আব্দুল মালেক সাহেব হিন্দুস্তান সফরে শুধু তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য ৮৫ কিলোমিটারের দীর্ঘপথ সফর করে তাঁর কাছে যান এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ইলমী আলোচনা করে ফিরে বলেন, “কেউ যদি নিজ ইলমকে পরিপক্ক মনে করে তাহলে সে যেন এর সামনে ৫ মিনিট বসে নিজ জ্ঞানকে যাচাই করে তাহলে ৫ মিনিট পরেই নিজেই নিজেকে বুঝতে পারবে যে, সে কত বড় মূর্খ এবং সাথে সাথে তার আত্ম-অহমিকার চিকিৎসাও হয়ে যাবে”৷
মুয়াররিখুল হিন্দ নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভীর সাথে দীর্ঘ কথা হয়। নিজ খান্দানের মনীষা, নিজের দুর্লভ সংগ্রহশালা, বিশ্ব ইতিহাস, সিরাত, দাওয়াত ও তাবলীগের চলমান বিষয় নিয়ে তিনি অসাধারণ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাবলীগ নিউজ বিডিডটকমকে।
ও আরেকটি বিষয় জানাই!! হযরতজী মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলভি হাফিযাহুল্লাহকৃত রুজুনামা দেওবন্দে নিয়ে যাওয়ার সময় এর বাহকদের মধ্যে ছিলেন আমাদের আজকের এই চেরাগে কান্ধলা। কি বিশ্বাস হয়? যার বার্তা বাহক এমন লোক, তাহলে প্রিয় পাঠক সহজে অনুমেয় তিনি কত বড়।
মুয়াররিখুল হিন্দ, বাহরুল উলুম, শায়খুল আরব ওয়াল আজম মাওলানা নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভীর ভাষায়, আমাদের হযরতজীর (মাওলানা সাদ কান্ধলভী) ছেয়ে বড় ছ”বর”কারী কোন ব্যক্তি, আমি কয়েক শতাব্দীর ইতিহাসে আর কাউকে পাইনি।