বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১, ০১:৫৫ অপরাহ্ন
আবদুস সালাম| অতিথি লেখক; তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম| টঙ্গীর ময়দানে মাদরাসার যেই ছাত্রগুলোর সেদিন কপাল ভেঙ্গেছিলো, মাথা ফেটেছিলো, হাঁড়গোড় চূর্ণ হয়েছিলো, আজকে তাদের কপট কান্না শুনে খুব বিরক্ত লাগে; অপ্রসন্ন বোধ হয়। একথা ভেবে যে, আমরাই কেন বারবার ব্যবহার হতে যাবো? সৃষ্টিকর্তা তো আমাদের মাথায়ও কিছু ঘিলু দিয়েছেন। তাহলে কেন আমরা যার-তার ডাকে হুটহাট যত্রতত্র অযথাই হইহল্লা শুরু করে দিবো?
স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক নেতার কাছে বিকিয়ে যায় না। নিজেদের দাবিগুলো অবাক করা আন্দোলনে আদায় করে নেয়। অথচ মাদরাসার ছাত্ররা দু’এক ছা-পোষা ইসলামী নেতার আকাশ ফাঁটানো চিৎকারকে আসমানী বার্তা মনে করে পঙ্গপালের মত আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহুতি দেয়।
অযোধ্যা অভিমুখে লংমার্চে এই ছাত্ররাই কিন্তু গুলি খেয়েছে, আর নেতারা ও তাদের ছেলেপুলেরা সহী সালামতে বাড়ি ফিরেছে।
শহীদী মসজিদের সামনে এই ছাত্রদেরকেই কিন্তু প্রাণ দিতে হয়েছে। নেতারা তখন ক্ষমতাসীনদের দান করা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চেঁপে ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে’ থাকার বানী শুনিয়েছে।
৫ই মে’তে এই ছাত্রদেরকেই ধরাশায়ী হতে হয়েছে। আর নেতারা সন্ধ্যায় ‘জিহাদ থেকে পলায়ন করা মহাপাপ’ বয়ান ঝেঁড়ে দিয়ে রাত না পোহাতেই ফোন বন্ধ করে ফাইভ স্টার হোটেলে সুখ নিদ্রায় তলিয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ তো আবার লণ্ডনের ফ্লাইটে বসে রাতের পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করেছে।
৫ই মে ছিলো সাম্প্রতিককালে মাদরাসা ছাত্রদের সাথে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় প্রতারণা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা চিরজীবনের জন্য ‘নেতার কথায় নাচবো না’ সবক গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু তারা অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলো না। আবার ছুটে গেলো টঙ্গীতে। আবারো নেতাদের পাতানো ফাঁদে পা দিলো। যারা সতর্ক করলো, তারাও উল্টো ‘জমহুর বিদ্বেষী’ তকমা পেলো৷ ফলে যা হবার তাই হলো। মাদরাসা ছাত্রদের কপাল ভাঙ্গলো। সিথীর সিঁদুর মুছে গেলো হরি দাসীর।
অনেকে বলে ‘মাদরাসার সরলমনা ছাত্রদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ভয় দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে’।
বাহ রে, যারা এই তথ্য উদঘাটন করে ফেলতে পারে যে, আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ‘র্যান্ড’ এর এজেন্ড, ‘র’ এর কর্মকর্তা, তারা অবুঝ ? জঙ্গিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে যারা নিজেদের গভীর অন্তর্দৃষ্টির দ্বারা অনুমান করে ফেলতে পারে এটা ‘জিহাদ বিরোধী’ আন্দোলন, তারা সরলমনা? তাদেরকে ভুলানো ভালানো এতো সোজা মনে করবেন না বরং তাদের মাথার ঘিলুটুকু তারা তাদের ছা-পোষা গলাবাজ নেতাদের জুতার তলে বর্গা রেখেছে। এটাই মূল সমস্যা।
বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে লিখে রাখতে পারেন, ক’দিন পরে আবারও যখন ‘গায়েব’ থেকে কোন ডাক আসবে তখন এই ছাত্ররাই সবার আগে আগে থাকবে। আবার মার খাবে। আবার আহত-নিহত হবে। কেউ সতর্ক করলে তাকে আবার জমহুর বিদ্বেষী বলবে, ক’দিন পর প্রতারণা বুঝতে পেরে ঠিকই আবার কপট কান্না জুড়ে দিবে। ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ইতিহাস আমাদেরকে এটাই বলে দেয়।
আমার কথা এখানেই শেষ।
তবে এই লেখা থেকে হয়ত কিছুটা ক্ষোভের প্রকাশ পেয়ে গেলো। কী করবো বলুন? যারা প্রতারিত হচ্ছে তারা তো আমাদেরই হুজুর জাতি ভাই। বারবার তাদের প্রতারণায় ফাঁদে পা দেওয়ায় কষ্ট লাগে। সেই কষ্টের জায়গা থেকেই কথাগুলো বলে গেলাম।
উদ্দ্যেশ্যঃ আমাদের কওমীর ছেলেরা যেন আর কোন প্রতারণার ফাঁদে পা না দেয়।
যাদের হাতে উঠবে একদিন দ্বীনের ঝাণ্ডা, তারা যেন না হয় চিলের পেছনে ছুটা কান উদ্ধারকারী দল। এটাই প্রত্যাশা।
ফেসবুক থেকে নেয়া