সোমবার, ০৮ মার্চ ২০২১, ০৩:০৯ অপরাহ্ন
ষ্টাফ রিপোর্টার, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম
কওমি মাদরাসার শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বয়ে গঠিত সর্বোচ্চ শিক্ষা বোর্ড ‘আল হায়আতুল উলিয়া লিল জামিয়াতুল কওমীয়া বাংলাদেশের অধিনে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) ও বেয়াকুল মাদরিসিল আরাবিয়ার অধিনে মিশকাত (স্নাতক) ৩শতাধিক পরিক্ষার্থীর সমাপনি পরিক্ষা দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বোর্ড দুটির অনিয়ম, সেচ্চাচারিতা ও দুর্নীতির ফলে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছন বলে সংশ্লিষ্ট মাদরাসা গুলোর অভিযোগ। তারা এর প্রতিকার চেয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বরাবরে গতকাল আবেদন করেছেন।
গত বছর দশম সংসদের শেষ অধিবেশনে ‘কওমি মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান আইন, ২০১৮’ পাসের মধ্য দিয়ে ‘আল-হায়আতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে যে সর্বোচ্চ বোর্ডের অধীনে কওমি শিক্ষাক্রমের দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মানের সনদ প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই আইন পাস হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৮ এপ্রিল। আইন পাশের পরই র্শিক্ষাবোর্ডটির এমন নিয়ম বহিভূত কার্যক্রমের প্রতিকার চেযে শিক্ষামন্ত্রনালয়ে শিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে গতকাল আবেদন করেছে বাংলাদেশের ৮টি বৃহৎ কওমী মাদরাসা। বেফাক ও হাইয়াতুল আউলিয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফি। তার বাধর্ক্যজনিত অসুস্থতার কারণেই এই অতিশয়পর বয়োবৃদ্ধ ব্যাক্তিকে ব্যাবহার করে একটি স্বার্থন্বেশী মহল শিক্ষাবোর্ড নিয়ে রাজনীতি ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন হুমকীর মধ্যে পড়ছে।
জানা যায়, কওমী মাদরাসা সবোর্চ্চ শিক্ষাবোর্ড হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতুল কওমীয়া বাংলাদেশ ও বেয়াকুল মাদারিসিল আরাবীয়া নিয়ম বহিভুত করার্যক্রমে শিকার হচ্ছে ৮টি মাদরাসা। সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে গতকাল ৮টি মাদ্রাসার কাছে সমাপনি পরিক্ষার প্রবেশপত্র প্রেরণ করে। এতে প্রবেশপত্রে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার নাম না লিখে “বেয়াকুল মাদারিসিল আরাবিয়া” ও হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতুল উলিয়া কওমীয়া বাংলাদেশ লেখা রয়েছে। নিচে আবার সংশ্লিষ্ট মাদরাসার মুহতামিম (প্রেন্সিপাল) এর শীল সাক্ষর দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বোর্ডের কোন মুহতামিম হয়ে না। তাই সংশ্লিষ্ট মাদরাসা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষায় সেখানে সাক্ষর করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন, ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাপনি পরিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। এছাড়া একজন ছাত্র সংশ্লিষ্ট মাদরাসা থেকে পরিক্ষার ফি বোর্ডে জমা দিয়ে রেজিষ্টশন করলেও প্রবেশপত্র ২/৩টি আলাদা আলাদা ইস্যু করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে। এটি অসতর্কতামূলক ভুল উল্লেখ করে এসব মাদরাসার মুহতামিম কওমী শিক্ষা বোর্ডে “ভুল সংশোধন” আবেদন করলে কতৃপক্ষ তার গ্রহন করেন নিয়ে। তারা বলছেন এটি ভুল নয় ইচ্ছে করেই করা হয়েছে।
জানাযায়, অভযোগকারী এসব মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (মার্স্টাস) ও মিশকাত (স্নাতক) তিন শতাধিক শিক্ষার্থীরা সমাপনি পরিক্ষা অংশ নেয়া অশ্চিত । তাদের মধ্য ছাত্রের পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। আশংকা করা হচ্ছে হাইয়াতিল উলয়া ও বেফাক মাদরাসা সুমুহের সাথে এমন বৈষিম্য, নীতিহীন অন্যায় আচরণ করত থাকলে এই মাদরাসাগুলোর সাথে থাকা আড়াই শতাধিক মাদরাসা বোর্ড থেকে বেরিয়ে আলাদা অবস্থান নিতে পারে। এতে করে হুমকী ও ভাঙ্গনের মূখে পড়তে পারে সরকারে নবগঠিত স্বীকৃতি প্রাপ্ত কওমী শিক্ষাবোর্ড হাইয়াতুল উলিয়া।
কওমী মাদ্রাসার তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে বেফাক ও হাইয়াতুল উলিয়া মাদ্রাসার নাম ব্যাবহার না করে বোর্ডের নামে সরাসরি পরিক্ষা নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার মুহতামিমগন বলছেন, কোন প্রকার লিখিত নোটিশ ছাড়া আমাদের এ-ই মাদরাসাগুলোর সাথে এমন আচরণ কোনভাবেই আইন ও সংবিধান সম্মত নয়। এতে করে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়ার পাশাপাশি ছাত্রদের পরিক্ষা না দিতে পারলে ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। যায় অমানবিক, অন্যায়, বৈষম্য ও বেআইনি। তারা বলেন, আমরা একটি শিক্ষাবোর্ডের কাছে তার কখনো আশা করি নি।
এবিষয়ে আল মাদরাসাতুল মইনুল ইসলাম বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামি মুফতী আতাউর রহমান বলেন, হায়আতুল উলইয়া আমাদের মাদ্রাসার নামে ছাত্রদের পরিক্ষা নিবে না বলছে। যদিও মাদরাসার পক্ষ থেকেই বোর্ডে মাদরাসার নামে ছাত্র-ছাত্রীদের ফি জমা নিয়ে রেজিষ্টশন করা হয়েছে। কোনো আইনানুগ ধারাকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
মারকাজুল উলুম আশ শরিয়া সাভার এর মুহতামিম মাওলানা জিয়া বিন কাসেম বলেন, কোন প্রকার প্রতিষ্ঠানিক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নোটিশের মাধ্যমে আমাদেরকে জানানো হয়নি, সে জন্য আমরা এ সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনে করি। অসাংবিধানিক মনে করি।