রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০২:০০ অপরাহ্ন
মাওলানা নিযামুদ্দীন মিসবাহ । তাবলীগ বিডি.কম
কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি লাভের পর প্রথম মারকাযী পরীক্ষা অনুষ্ঠানেই দারুণ অযোগ্যতা ও অদক্ষতার স্বাক্ষর রাখলো হাইয়্যা ও বেফাক। এ নিয়ে আশংকাটা শুরু থেকেই ছিলো। অগ্রিম প্রকাশ করিনি, ভুল বুঝাবুঝির অাশংকায়। এটা অনুমেয়ই ছিলো, স্বীকৃতিপূর্ব কওমী সনদের চেয়ে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সনদের গুরুত্ব বেশি থাকবে।
শুধু তাই নয়, এনিয়ে বিবিধ রকমের অসাধু কাজকারবারও বেশি হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি বাড়বে। পেপার মূল্যায়নে নয়ছয় হবে। নকল প্রবণতা তৈরী হবে। টাকার বিনিময়ে ভালো ফলাফল কেনার চেষ্টা হবে। বোর্ড কর্মকর্তাদের সন্তানদের মার্কস বাড়িয়ে দেয়া হবে। এই আশংকাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক। যে কেউ এর দায়িত্ব নিক, এ শংকা গুলো থাকবেই। কিন্তু দায়িত্বশীলতা সে ভিন্ন জিনিষ। এখানে পেশাদারিত্বের প্রশ্নটি সরাসরি জড়িত। দক্ষতার বিষয়টি গৌণ নয়, মূখ্য। প্রশ্ন হলো বোর্ড কর্মকর্তারা এ এব্যাপারে কতোটা দক্ষ? এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের কি কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে?এক কথায় এর উত্তর, নেই।
তাহলে শুধুমাত্র বড় হুজুর বা হুজুরের ছেলে বলেই যদি বোর্ড কর্মকতা হয়ে যায়, তাহলে একম বহু বিপর্যয়ের জন্য এরা যেনো প্রস্তুত থাকেন। দ্বিতীয়ত : একই লোক বোর্ড কর্মকতা আবার তিনিই কোন মাদরাসা পরিচালক, এই পদ্ধতিটা চুড়ান্ত পর্যায়ের রাবিশ সিস্টেম। এটা কোথাও নেই। এর অর্থ হলো প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ যাবতীয় অনাচারের পথ উন্মুক্ত করে দেয়া। হাইয়্যা কর্তৃপক্ষ এই পরীক্ষা পরিচালনার আগে সরকারী শিক্ষাবোর্ডের পদস্থ ব্যক্তিদের দ্বারস্ত হওয়া উচিৎ ছিলো।
এক্সপার্টদের সাথে এ নিয়ে মত বিনিময় করা যেতো। কিন্তু এমন কোন কিছু আমাদের নজরে আসেনি। কওমী মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের এটা বহু দিনের পুরনো অভ্যাস। এরা প্রয়োজনে মূর্খ থেকে যাবে, তবু নিজেদের চ্যানেলের বাইরের কারও কাছ থেকে কিছু শিখবেনা, গ্রহণ করবেনা। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর এরা এতোটা হোপলেস হয়ে গেছে, যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই তারা অনেক সময় নিয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে দ্বিধান্বিত হয়েছে। তদন্তের আগে একে ওকে দোষারোপ করা হয়েছে। অবশেষে তদন্তের নামেনযা হলো তা আরো লজ্জার। এ তদন্তে মূল অপরাধীরা আড়ালে থেকে গেছে। কেউ কেউ গিনিপিগ হয়েছে। মূল অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে গেছে এর প্রমাণ হলো, দ্বীতিয়বার প্রশ্নপত্র ফাস হওয়া। এরা প্রশ্ন ফাঁস রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেনি। হাইয়্যা ও বেফাকের এইসব আনাড়ি কর্মকতা কর্মচারী দিয়ে আর যা হোক একটি শিক্ষাবোর্ড চলতে পারেনা। যারা একটা মাদরাসাই ঠিক মতো চালাতে পারেনা, বোর্ড চালাবে কীভাবে? যে কোন কাজ সম্পাদন করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হয়। প্রশিক্ষণ নিতে হয়। অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এসব বোর্ডে যারা দায়িত্ব পালন করছে, খুঁজ নিলেই দেখা যাবে এসব বিষয়ে তারা কতোটা আনাড়ি। এটা আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েই বলছি। বোর্ড পরিচালকদের নিয়ে ভাববার এটাই উপযুক্ত সময়।
এখন যদি ব্যবস্থাপনা নিয়ে না ভাবা যায়, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেয়া যায়, তাহলে কয় দিন পর এসব আগাছারা অক্টোপাসের ন্যায় চেয়াগুলো আঁকড়ে ধরবে। সরকার এদেরকে নিয়ে পড়েছে মধুর সমস্যায়। বগলদাবা করে রাখতে হলে এদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবেনা। সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে এই ম্যাসেজটা আছে, যদি সরকার এদের খুঁতগুলোর দিকে অঙ্গুলি তাক করে, এরা বেঁকে বসবে। ইসলাম গেলো বলে জিকির তুলবে।
সুতরাং কে নিতে যাবে এই অহেতুক রিস্ক? সুতরাং তাদের মনোভাব হলো তোমাদের সমস্য পারলে তোমরা শেষ করো। নয়তো সরকার কিছু করতে যাবেনা। কওমী মাদরাসার ছোট একটি পরিসরে ১৯টার মতো শিক্ষাবোর্ড! সবগুলো একত্রিত করলেও একটি সরকারী বোর্ডের ভগ্নাংশের সমান হবেনা। এখান থেকে ছয়টি বোর্ড নিয়ে আরেকটা হাইয়্যা গঠন করা। এসব অনিয়ম অশৃংখলা এরা বুঝেও না বুঝার ভান করেছে। এসব ফাজলামি মেনে নিয়েছে। অনেক কিছু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছে। ফলে এদের আভ্যন্তরীণ নোংড়ামীটা সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু এ নিয়ে চুপ থাকতে হয় তাদের। উপর মহল থেকে এমনই নির্দেশ দেয়া। কিন্তু সবশেষে শৃংখলা ফেরাতে সরকারকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে। আজ হোক বা কাল। নয়তো এসব কর্মের একটা দায় সরকারের উপরও বর্তাবে।
নিজেদের চোখের সামনে এতো কিছু যে ঘটলো, হাইয়্যার কর্তা ব্যক্তিরা কি তাদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা স্বীকার করে পদত্যাগ করবেন? বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটা অতি আশা। এখানে ঘাড় ধরে বের না করা পর্যন্ত নিজ থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার নজির একেবারেই অনুপস্থিত। হাইয্যা কর্তৃপক্ষের আরেকটা কাজ দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে, তাহলো এরা কাকে যেনো বাচাতে চাইছে। আড়াল করতে চাচ্ছে বড় কাউকে। আর গিনিপিগ বানাচ্ছে অন্যকে। দোষ চাপাচ্ছে অমুক তমুকের ঘাড়ে। এর ফল হবে আরো বয়াবহ। এর মধ্য দিয়ে তারা সমস্যাকে স্থায়ী রূপ দিয়ে ফেলবে। নতুন নতুন বেপরোয়া বুজুর্গ তৈরীর সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কিন্তু উলামারা যদি ইসলামের প্রশ্নে আন্তরিক হন, উম্মাহ দরদ যদি তাদের অম্তরে থাক, তাহলে এদের পদত্যাগ করাই উচিৎ। যোগ্যদের হাতে দায়িত্ব ন্যাস্ত করা দরকার। বোর্ড ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আলাদা করা সময়ের দাবী। আমার একান্ত প্রত্যাশা, ইগো বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা এটা নিয়ে ভাববেন। প্রশোজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। ভুল স্বীকার করা, দূর্বলতা মেনে নেয়া দায়,কাধে নেয়ার মধ্যে কোন লজ্জা নেই। এটাও সাহসিতা। অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা।
পক্ষান্তরে নিজেদের দূর্বলতা আড়াল করা, অন্যদের উপর দোষ চাপানো, অমুখ তমুখের ষড়যন্ত্র বলে নিজেকে এবং আবাল মুরিদ গোষ্ঠীরে বুঝ দেয়া অধপতনের লক্ষণ। একটি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লুকিয়ে রেখে ক্যান্সারে রূপান্তরিত করে ফেললে ডাক্তারেরও কিছু করার থাকেনা। কওমী মাদরাসার সর্বত্র এই যে আদর্শিক নৈতিক অধপতন এটা দূর্বলতা লুকানোর দর্ঘস্থায়ী ফল। সময় এসেছে কওমী মাদরাসা নিয়ে নতুন কিছু ভাবার, উদ্যোগ নেয়ার সর্বোপরি পদক্ষেপ নেয়ার।।