মঙ্গলবার, ০২ মার্চ ২০২১, ০৪:১১ অপরাহ্ন
আবু উমায়ের হামজা, নিজামুদ্দিন মারকাজ, দিল্লী, ভারত থেকে
বাংলাদেশ তাবলীগ জামাতের জিম্মাদার সাথী হাফেজ আব্দুর রহিম রাজনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার খবর নিজামুদ্দিন মার কাজে আজ মাগরিবের পরে পৌছলে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমীর শায়খুল ইসলাম মাওলানা সাদ কান্ধালভী দা. বলা খবর পেয়েই নফল নামাজে দাড়িয়ে জান বলে জানাজায়। চোখের পানি ফেলে শহীদের জন্য দোয়া করেন। বাদ মাগরিব আলমী মারকাজে তাঁর মাগফিরাতের জন্য বিশেষ দোয়া হয়।
এসময় বাংলাদেশের তাবলীগের সাথীরা হযরতজী সাদ কান্ধালভীর কাছে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, সাথীদেরকে জানিয়ে দাও হাফেজ আব্দুর রহিম রাজনের হত্যাকারীদের যেন তারা ক্ষমা করে দেয়। এটিই নবীওয়ালা কাজের সিফত। রাসুলে করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কলিজার টুকরো চাচা হযরত হামজা রায়িঃ এর নির্মম হত্যাকারী হিন্দা ও ওয়াহশীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এটিই নবী ওয়ালা মেহনতের ছিফাত। তিনি, সাথীদের ও শহীদের পরিবার পরিজনকে যেন আল্লাহ সবরে জামিল নসিব ফরমান এই দোয়া করেন।
হযরতজী মাওলানা সা’দ কান্ধালভী তখন আরো বলেন, দাওয়াতের কাজে প্রতিশোধ নেয়া যাবে না। যার ভিতরে প্রতিশোধের জজবা থাকবে সেই দায়ী হতে পারে না। জানের দোষমনদেরকেও দ্বীনের খাতিরে ক্ষমা করে দিতে হবে। আরও রাজনের হত্যাকারীরাতো অবুজ মুসলমান। আমাদেরই ভাই। তাদের ভুল বুঝিয়েছে কেউ। তাদের জন্য দোয়া করা। আরও কেউ যদি এমেহনতের সাথে লড়তে চায়, তোমরা সবর কর। একাজ আল্লাহর। এই কাজের সাথে কেউ লড়লে এটি আল্লাহর সাথে লড়াই হবে। তিনিই এর উত্তম ফায়সালা করবেন।
উল্লেখ্য যে, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর তাবলীগের জিম্মাদার হাফেজ আবদুর রহিম রাজন(২৭)কে পেট্টল ঢেলে গায়ে আগুন দেয়ার টানা ২২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেলেন। সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ১৯ মে রাতের আধাঁরে তাবলীগের পাকিস্থান শুরাপন্থী সমর্থকরা কাটিয়াদী থানা থেকে ৫০ গজ দূরে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পিছনের গলিতে রাজনের গায়ে পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কটিয়াদী হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। রাজন তাবলীগ জামাতের নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারী ছিলেন।
রাজন হাসপাতালে নিজেই জবানবন্দি দিয়েছেন,কিশোরগঞ্জের কাটিয়াদী থানায় নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারর্কাজের অনুসারী মূলধারা একটা তাবলীগের সাথীর গায়ে পেট্রল ঢেলে হত্যার করে, পাকিস্থানী কথিত শুরার সমর্থকরা।
কিশোরগঞ্জ তাবলীগ মারকাজের জিম্মাদার সাথী আব্দুর রহিম রাজন নিজ মহল্লায় একটুও তাবলীগের জামাত এলে তাদের ইস্তেকবাল করেন। তখন মসজিদে তাবলীগ জামাতকে থাকতে বাঁধা দেয় পাকিশুরাপন্থী হেফাজত সমর্থক সোহেল আহমদ ও মাহমুদুল হাসান। এতে তারা ব্যার্থ হয়ে আব্দুর রহিমের উপর ক্ষিপ্ত হন। সে রাতে তারাবির নামাজ পড়তে আব্দুর রহিন যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন, তখন সোহেল, মাহমুদুলসহ কয়েকজন তাকে পথরোধ করে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আব্দুর রহিম তখন মাটিতে গড়াগড়ি করে চিৎকার করলে হেফাজতপন্থী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তিনি তখন গড়াগড়ি করে পাশের নর্দমায় ঝাপ দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। চিৎকার শুনে আব্দুর রহিমকে স্থানীয় মুসল্লিরা উদ্ধার করে কাটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্রেলেক্সে নিয়ে আসে। সেখান থেকে তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। আবদুর রহিমের শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ডাক্তার থাকে তৎকানীক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।২২দিন জীবনের সাথে লড়াই করে আজ তার মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য যে, এর আগেও যুবায়েরপন্থী ও হেফাজত সমর্থকদের হামলায় পহেলা ডিসেম্বর হামলায় তাবলীগ জামাতের আরো দুজন সাথী খুন হন। কিন্তু বিশ্ব আমীর কোন প্রকার প্রতিশোধ বা বদলা নিতে নিষধ করায় তাবলীগের সাথীরা কারো নামে থানায় মামলা পর্যন্ত করেন নি।