রবিবার, ০৭ মার্চ ২০২১, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
ষ্টাফ রিপোর্টার, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম
সারাদেশে এখন তাবলীগ ও হেফাজত সমর্থিত কওমী আলেমদের ভয়ংকর বিরোধ প্রকাশ্যেই চলছে। তাবলীগের মূলধারার সাথীরা কোনভাবেই হেফাজত নেতাদের ও তাদের সমর্থক আলেমদের নেতৃত্ব মানছেন না। কেন? বা তাবলীগের ভিতরে যে ক্ষুদ্র অংশটি হেফাজতকে সমর্থন করেছে, মূল তাবলীগওয়ালারা কেন তাদের আলাদা করে দিলেন বা আলাদা হয়েই তারা কাজ করছেন। তাবলীগ ও হেফাজতের যে ভংকর বিরোধ ও সংঘাত এটি পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। নেই ওজাহাতি জোড়। করণ পৃথিবীর সকল দেশে তাবলীগ থাকলেও হেফাজত কোন দেশেই নেই।
বাংলাদেশে হেফাজত ইসলাম সমর্থক আলমেরা একটি আওয়াজ তুলার চেষ্টা করেছিলেন, তাবলীগওয়ালারা আলেমদের সাথে না আওয়ামদের সাথে থাকবে। এমন ইস্যু বানিয়ে তৈরি করে সারাদেশে তাবলীগের সাথীদের কোনঠাসা করে রাখার চেষ্টা করছেন। যদিও পৃথিবীর কোন দেশেই এমন কোন শব্দ নেই। তাবলীগের বিশ্ব আমীর নিজেই একজন বিদগ্ধ আলেম, শায়খুল হাদীস। বোখারী শরীফের উস্তাদ।
তার সাথে বিশ্ব মারকাজের আওতাধীন সারা দুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ আলেম তাবলীগের সাথে জড়িত।
তাবলীগী সাথীদের উপর হামলা,নির্যাতন খুন করে তাদের দমানোর চেষ্টা করে হেফাজতের নেতারা এখন ক্লান্ত। ইতোমধ্যে তারা তিনজন তাবলীগের সাথীকে এই ইস্যুতে খুন করেছেন। তাবলীগের সময় লাগানো বাস্তব কাজের ময়দানে অনভিজ্ঞ এসব অপরিপক্ক রাজনৈতিক উচ্চা বিলাসী আলেমদের নেতৃত্বে তাবলীগের সাথীরা আর কোনভাবেই মেনে নিতে তৈরি না। বরং তাদের শতবাঁধা ডিঙ্গিয়ে তাবলীগের সাথীরা আগের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী ও সঙ্গবদ্ধ।
তারা তাবলীগের কেন্দ্রীয় বিশ্ব মারকাজ ভারতের নিজামুদ্দিনের তত্বাবধানে থাকা আলেমদের তত্বাবধানে থাকতেই দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশে দেওবন্দিধারার প্রচুর আলেম তাদের সাথে আছেন। যদিও তারা রাজনৈতিক আলেম নয় বলে খুব আলোচিত নন। আর তাবলীগের সংশ্লিষ্ট আলমেরা নিজেদের এখলাসের জন্য নিজেদের আড়াল করে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। সম্প্রতি এসব আলেম ও মাদরাসার ছাত্রদের নিয়ে ঢাকায় মূলধারার তাবলীগওয়ালাদের বেশ বড় জোড় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।
হেফাজত সংশ্লিষ্ট কওমী মাদরাসা বোর্ড তাবলীগের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত কওমী মাদরাসাগুলোকে কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় অংশ নিতে বাঁধা দিলে তারা এনিয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।যদিও হেফাজতীদের গভীর সখ্য মওদুদীবাদী শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোবারক হোসেন এবছর কওমী মাদরাসার দাওরা পরিক্ষা দিয়ে মাওলানা ঠিকই হলেন। এতে তাদের কোন বাধা নেই। বোর্ডের এই দ্বীীমূখি আচরণে বাধ্য হয়েই সর্বশেষে তাবলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশের পাঁচশতাধিক কওমী মাদরাসা নিয়ে ইতোমধ্যে “জাতীয় কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ” পথ চলা শুরু করেছে। এছাড়া “জাতীয় দ্বীনী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড” নামে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নিয়ন্ত্রিত কওমী শিক্ষাবোর্ড তাবলীগের মূলধারার সমর্থক এবং হেফাজত চিন্তার বিরোধী। তাই তাবলীগের সাথে আলেম উলামা নেই বা আলেমদের থেকে তারা বিচ্ছিন্ন একথাটি সম্পূন্ন অযৌক্তিক এটি সহযেই বোঝা যায়। বরং এই আলেমরা তাবলীগের সাথীদের মতোই একেবারেই রোড লেভেলে কাজ করে অভ্যস্ত। এটি বুঝার সহজ উপায় হেফাজত সংশ্লিষ্ট আলমেরা একটি ছোট মাদরাসার সভা করলেও কয়েকমাস পূর্বে থেকে চাঁদা কানেকশন, মাইকিং, পোস্টার প্রচারণা করেও লোক জমাতে পারেন না। অপরদিকে যুগ যুগ ধরে টঙ্গীর ময়দানে তাবলীগের সাথীরা সুবিশাল আন্তর্জাতিক প্যান্ডেল করতে একটাকা চাঁদা কালেকশন কোথাও করেছেন এমন নজির একটিও নেই । এছাড়া কোন প্রকার লিফলেট, পোষ্টার, মাইকিং,বিজ্ঞাপন ছাড়াই কেবল রোড লেভেলের ঘরঘর গাশত করে বিশ্ব ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ মুসল্লী সমবেত করার নজির সবার চোখের সামনে। এতে করে স্পষ্টই প্রতীয়মাণ যে, তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি,চেইন অব কমান্ড কতটা শক্তিশালী ও সুবিন্যস্ত।
এতে করে এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে সারাদেশের গ্রামগঞ্জ শহরে লক্ষ লক্ষ তাবলীগের সাথীদের থেকে এখন হেফাজত সংশ্লিষ্ট কওমী আলেমগন সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। যদিও বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসায় ৮০ভাগ শিক্ষার্থী তাবলীগের সাথীদের সন্তান। এতে করে হেফাজত সংশ্লিষ্ট কওমী মাদরাসাগুলো আগামী দিনে নানান সংকটে পড়বে এটি বুঝা যাচ্ছে। একসময়ের গভীর সখ্য এই দুই ধারার মাঝে এখন বাংলাদেশে কেন এই বিরোধ এতো প্রখট হলো। এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে বেড়িয়ে এসেছে নানান চঞ্চলকর তথ্য।
চোখ রাখুন আগামী কাল ২য় পর্বে…