শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০২:২৬ অপরাহ্ন
ভূমিকা
লন্ডনের মাওলানা মেহবুব সাহেব দামাত বারকাতুহুম এর বয়ানের কিস্তি থেকে তাবলীগের মহান মেহনতের বর্তমান সঙ্কটে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে আমরা সিরিজ প্রকাশ করছিলাম।
☆পরবর্তী সিরিজ – কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলমী শূরার অগ্রহনযোগ্যতা। দুই সপ্তাহ পরে আনুমানিক ১৫ আগস্টের দিকে প্রকাশিত হতে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।
☆ বর্তমান সিরিজ – আলমী শূরার অপরাজনীতির ব্যর্থতা ও পতন।
আলমী শূরাদের ব্যর্থতার ব্যাপারে মাওলানা মেহবুব সাহেবের বয়ানের বিভিন্ন কিস্তির সারাংশ।
লক্ষণীয়: যথা সম্ভব আক্ষরিক অনুবাদের চেষ্টা করা হয়েছে।
◆ কথিত আলমী শূরা বর্তমানে মৃত্যু শয্যায় প্রহর গুনছে।
প্রতিটি দানেই কথিত আলমী শূরাগণ পরাজিত হয়েছেন। এতদসত্ত্বেও তারা তওবা করতে বা নিজামুদ্দিনে ফিরে যেতে অস্বীকার করছেন। এই জুলাইতেও রায়বেন্ডের কিছু হযরতগণ ব্লাকবার্ন ইজতেমায় এসেছেন। হাজী সাহেব দামাত বারকাতুহুম পুনঃপুনঃ উল্লেখ করেছেন তিনি ব্লাকবার্ন ইজতেমা সম্পর্কে কিছু জানেন না। এটা মাসোয়ারা দ্বারা অনুমোদন হয়নি। যারা এসেছিলেন তারাও রায়বেন্ড থেকে (অফিসিয়ালী) আসেন নি। তাঁর নামে যে চিঠি প্রকাশিত হয়েছে তাও ভুয়া প্রমাণ হয়েছে। হাজী সাহেবও নিশ্চিত করেছেন অনেক আগে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি কোন চিঠি দেননি। তাই ব্লাকবার্ন ইজতেমা ভুয়া ইজতেমা। এর জন্য মেহনত, অংশগ্রহণ, অবদান সবই মসজিদে যেরারের সমতুল্য। একই সাথে এটা উম্মতের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি।
গত বছর মাওলানা ইব্রাহীম দেউলা হাফিজহুমুল্লাহ মদীনা মুনাওয়ারাতে আরব সাথীদের মধ্যে কথা বলছিলেন। এরপর মাওলানা আব্দুর রহমান সাহেব কিছু কথা বলতে গেলে সাথীরা তাকে বসিয়ে দেন এবং বলেন যে, “আমরা আপনার থেকে কিছু শুনতে চাই না।”
“নিজামুদ্দিন আমাদের মারকাজ। আমরা সেখান থেকে হেদায়েত নিয়েই দাওয়াতের মেহনত করব।”
শেইখ মাখযুমি মাদানী দামাত বারকাতুহুম এবং তাঁর সাথীরা মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবকে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজামুদ্দিন ফিরে যান। মাওলানা ইব্রাহীম সাহেব হাফিজহুমুল্লাহ বলেন, “মাওলানা সাদ আমাকে বার বার জোর দিয়ে অনুরোধ করছে। ইনশাআল্লাহ আমি খুব শিগগিরই নিজামুদ্দিন মারকাজে প্রত্যাবর্তন করব।” তিনি নিজে এ কথা বলেছেন।
রায়বেন্ড মারকাজের এই রাজনৈতিক আলমী শূরাগণ মদীনার সাথীদের বিশেষ ভাবে নিজামুদ্দিন মারকাজের বিরুদ্ধে ফুঁসলাতে চেষ্টা করে।
দিবারাত্রি বহু প্ল্যান প্রোগাম করে ড. শওকত সাহেবের মাধ্যমে মদীনার সাথীদের মধ্যে বিভক্তি এবং সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।
তারা ভেবেছিল সারা বিশ্বের সাথীরা মদিনাতে আসবে, আলমী শূরাদের সাথে মাসোয়ারা করবে। তাদের সকল বুযুর্গদের সম্মান করা হবে।
আসলে এটা জয় পরাজয়ের কোন বিষয় নয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিছন্নতা অভিযান। যাঁরা আন্তরিক তাঁরা রক্ষা পাবেন, যারা ব্যক্তিগত আগরাজ নিয়ে চলছেন তারা কেটে পড়বেন।
দাওয়াত হল একটা তাঁবুর মধ্য খুঁটির মত। যদি এটা অস্থিতিশীল হয়ে যায় অন্য খুঁটিগুলোও অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। তাই আগে একে পরিষ্কার করা, এরপর দ্বীনের অন্যান্য শাখা যেমন ইলম শেখার অন্য রাস্তা সমূহ , তাসাউফ ইত্যাদি। আমরা শুধু সবার জন্য নিরাপত্তা/আফিয়াত কামনা করি।
একজন দাঈ সকলের মঙ্গল কামনা করে, কারো কোন অমঙ্গল চায় না। একজন দাঈ কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করে না।
আলমী শূরাদের এই দাজ্জালী ফিৎনা সারা দুনিয়াতে প্লাবিত হয়। প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও মাওলানা সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে ফতোয়া ইস্যু হয়।
● সীরতের চির স্মরণীয় একটি অধ্যায়।
বদরের ঘটনা
যেন মক্কার কুরাইশদের মতোই যারা সর্ববিধ্বংসী নেশায় মাদীনা আক্রমণ করতে গিয়েছিল, সম্পূর্ণ অস্ত্রসজ্জিত হয়ে এবং সাথে উজ্জীবনকারিণী গায়িকা মহিলাদেরও নিয়েছিল। তাদের মিশন – মুসলমান এবং মদীনার ইসলামী জিন্দেগী ধ্বংস করা।
একই ভাবে, এই অশুভ আলমী শূরা ফিৎনা পাকিস্তান ত্যাগ করেছিল তাদের ব্লাকবার্ন ইজতেমা সফল করতে।
নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন,
১) তারা নেরুল যায়। সেখানে গিয়ে কয়েকদিন অবস্থান করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে সরকার তাঁদের বহিষ্কার করে।
২) সেখান থেকে যাওয়ার পরে তারা কোন পূর্বনিমন্ত্রণ ছাড়াই জর্ডানে যায়, যেন তারা মাওলানা ইব্রাহীম দেউলা সাহাবের জামাতের সাথী। কিন্তু আরবগণ তাঁদের সম্মানে চলে যেতে অনুরোধ করেন। কিস্তি ৪৩৪
৩) এরপর তারা পর্তুগাল পৌঁছে। এখানে তারা কিছুটা রিলাক্স করেন যেহেতু সেখানে প্রকৃত তাবলীগের মেহনত নেই। সারা দুনিয়া অনেক জামাত দেখেছে, অনেক জামাতের সাথে চলেছে কিন্তু কখনো পর্তুগালের জামাত দেখা যায় নি। সেখানে ইউরোপের নামে ৩০০ এর মত মজমা হয়েছিল, কোন জামাত বের হয়নি।
৪) তারা এক/দুই দিনের জন্য ফ্রান্সে অবস্থান করে। কোন জামাত বের হয় নি।
৫) তারা ব্লাকবার্ন ফিরে আসে এবং বুধবারে দারুল উলুমে উলামা জোড় রাখে। বহু কষ্টে মাত্র ২০০ জন জমা হয়েছিলেন। কোন জামাত হয়নি।
যত জামাত তারা গঠন করতে পেরেছিল সবই ছিল ভারত পাকিস্তান থেকে।
আলমী শূরাদের বাংলাদেশের কম্যান্ডার-ইন-চিফ কারী যুবায়ের সাহেবকে ভিসা দেয়া হয় নি।
তারা এমন লোককেও রেহাই দেয়নি, যিনি এতটা বয়স্ক, অসুস্থ ও দুর্বল, এবং নিয়মিতভাবে শক্তিশালী ওষুধের অধীন থাকেন; মাওলানা এহসান সাহেব দামাত বারকাতুহুম। এই সফরগুলির বেশিরভাগ দিনই তিনি ঠিক মত চেতনাও রাখতে পারতেন না। এরপরও তাঁকে কানাডা থেকে নিয়ে আসা হয়, যাতে পাকিস্তানী কমিউনিটির মধ্যে যারা আলমী শুরার প্রতি কিছুটা দুর্বল তারাও নিজেদের লোক মনে করে অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়। যদিও এতে কোন ফায়দা হয়নি। সত্যিকার অর্থে কোন জামাত বের হয়নি।
৬) মাওলানা ইব্রাহীম দেউলা সাহেব বার্মিংহামে মারকাজে যেরারে বয়ান রাখেন। [আসল মারকাজ ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের বিরোধীতায় এক মারকাজ বানানো হয়] এই মারকাজে যেরারে ১০০ এর মত লোক জমা হয়। তাঁদের এই জমায়েতে একই সময়ে আসল মারকাজের শবে জুমার মজমায় কোনই আসর পড়েনি। সেখানে স্বাভাবিক মজমাই ছিল। অন্যত্র (মারকাজে যেরারে) মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবের মত ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিও মুল মারকাজের মজমার উপস্থিতি কমাতে পারে নি।
৭) ১৪ই জুলাই কথিত আলমী শূরার পক্ষে লন্ডনে উলামা জোড় ছিল। অনেক কষ্টের পরেও ২০ জন লোক জড়ো করা যায় নি। যেমন মাওলানা আবরারুল হক হরদুঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাঝে মাঝেই বলতেন, “আকাশের তারকা যখন অক্ষচ্যুত হয়, তখন সে জ্যোতি হারায়।” মনে হচ্ছে ইব্রাহীম সাহেবের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। (মাওলানা ইব্রাহীম সাহেবও এতো ছোট মজমা দেখে অস্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। অডিও আছে।)
তাই একেবারে মক্কার কুরাইশদের মতোই যারা বেশ উদ্ধত এবং উৎফুল্ল অবস্থায় মদীনায় এসেছিল কিন্তু সম্পূর্ণ পর্যদুস্ত হয়ে ফিরে যায়। এই ফিৎনায়ে খবিসা আলমী শূরা এবং তাদের ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সেই একই জিনিস প্রমাণ হল।
ইজতেমা যেহেতু কতগুলো জামাত খুরুজ হল এর দ্বারা বিচার করা হয়, তাই তাদের খুরুজের অভাবই একটা প্রকাশ্য নিদর্শন যে তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
এটা সারা বিশ্বের সামনেই হয়েছে। এবং এটা পরিষ্কার সাক্ষ্য দিয়েছে যে আল্লাহ তায়ালা যাকে বেইজ্জত করেন কেউ তাকে সম্মান দিতে পারে না। (সূরা হজ্জ্ব:১৮)
এতো শক্তিশালী ফিৎনা! কিন্তু মুখলিসীনদের দুআর বিরুদ্ধে তেমন প্রভাব ফেলতে পারে নি যতটা ইসলামের শত্রুরা আশা করেছিল।
আল্লাহ তায়ালা নিজামুদ্দিন মারকাজ, হজরতজী মাওলানা সাদ সাহেব, নিজামুদ্দিনের শূরাগণ এবং নিজামুদ্দিনের অনুসরণকারী সকল সাথীদের হেফাজত করুন।
আমীন।