শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা
তাবলিগ জামায়াতের বিশ্বআমির শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভি ‘আলেম নন, মৌলভি নয়, হাফেজও নয়’ বলে হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফীর সম্প্রতি প্রদত্ত বক্তব্যে তুমুল সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে দেশজুড়ে। মাওলানা আহমদ শফীর এ বক্তব্যের জবাবে বৃৃহস্পতিবার (১ আগস্ট ২০১৯) চট্টগ্রাম লালখান বাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির ,বাংলাদেশের মুফতিয়ে আযম আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিটি নিচে হুবুহু তুলে ধরা হলো-
২৭ জুলাই ২০১৯ শনিবারের দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন-এ মুন্সীগঞ্জের টুঙ্গীবাড়ি সোনারং মাঠে ইসলামি মহাসম্মেলন নামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাওলানা আহমদ শফী সাহেব তাবলিগ জামায়াতের বিশ্বআমির শায়খুল হাদিস আল্লাম মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভি সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘সাদ আলেম নন, মৌলভি নয়-এমনকি হাফেজও নয়’।
জামিয়াতুল উলূম আল ইসলামিয়া লালখান বাজার, চট্টগ্রাম-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি হিসেবে আমি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী তাবলিগ জামায়াতের বিশ্বআমির আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাঁর সম্পর্কে জানি। আমি নিজে দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজে গিয়ে কোরআন-হাদিসভিত্তিক তাঁর বহু গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শুনেছি। গত রমজানে তাঁর ইমামতিতে খতমে কোরআনভিত্তিক তারাবির নামাজে অংশ নিয়েছি। তারাবির নামাজের পর আরবি ভাষায় লেখা সাহাবায়ে কেরামের সীরাতগ্রন্থ ‘হায়াতুস সাহাবা’র তালিম-লেকচার শুনেছি। এভাবেই তিনি গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে একজন বিজ্ঞ হাফেজে কোরআন হিসেবে তাবলিগ জামায়াতের এই বিশ্ব মারকাজে খতমে তারাবির ইমামতি করে আসছেন। এতে দেশ-দুনিয়ার লাখ লাখ মুসল্লি বিভিন্ন সময়ে অংশ নিয়েছেন, নিচ্ছেন। তাবলিগ জামায়াতের বিশ্বআমির শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভি দেওবন্দ ও সাহারানপুরের মতোই বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ও সুপ্রসিদ্ধ দিল্লির কাশিফুল উলুম নিজামুদ্দীন মাদরাসায় প্রায় দুই যুগ ধরে হাদিসের মহাগ্রন্থ আবু দাউদ শরিফ পড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনি গত তিন বছর ধরে ঐ মাদরাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে বোখারি শরিফ পড়াচ্ছেন।
বাংলাদেশে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এবং আরবজাহানসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম তাঁর ইমামতিতে বহুবার জুমার নামাজ আদায় করেছেন। পৃথিবীর লাখো কোটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লির উদ্দেশে আখেরি মোনাজাতের পূর্বে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে টানা ১৮ বছর তিনি হেদায়েতি বয়ান দিয়েছেন, যার বাংলা তরজমা করেছেন বর্তমানে তাঁর বিরোধী অবস্থানে থাকা হাফেজ মাওলানা যোবায়ের সাহেব। আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে একজন মহান অলি হিসেবে তাঁর বিষয়ে আমি নিজে অনেক শুভ স্বপ্ন দেখেছি। আমার মতো বিশ্বের হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বপ্নযোগে রাসুলুল্লাহ (সা)-কে এ রকম বলতে শুনেছেন, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব হকের ওপর আছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারপ্রধানদের পাশাপাশি বহু মন্ত্রী-এমপি এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল বরেণ্য ব্যক্তিগণও টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভির ইমামতিতে বহুবার জুমার নামাজ আদায় করেছেন। আখেরি মোনাজাতের পূর্বে বিশ্ব মুসলিমের উদ্দেশে প্রদত্ত কোরআন-হাদিসভিত্তিক তাঁর জ্ঞান ও বুদ্ধিদীপ্ত দিকনির্দেশনামূলক হেদায়েতি বক্তব্যও শুনে উপকৃত হয়েছেন।
এমন একজন বিশ্ব স্বীকৃত, সুপরিচিত এবং সুমহান ব্যক্তিত্ব, বিশ্বজুড়ে যাঁর কোটি কোটি ভক্ত-অনুসারী রয়েছেন, তাবলিগ জামায়াতের বিশ্বআমির শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে মাওলানা আহমদ শফী সাহেব সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘আলেম নন, মৌলভি নয়-হাফেজও নয়’ বলে প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়ে একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সাদপন্থীদের সঙ্গে কখনোই মিলবো না। তারা এতায়াতি নয়, হাতাহাতি। তারা বাতিল।’ মাওলানা আহমদ শফীর মতো একজন ব্যক্তির এ ধরনের বক্তব্যে পরিকল্পিতভাবে উস্কানি দিয়ে সমাজে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। মাওলানা আহমদ শফীর এই বক্তব্যটি পত্রিকায় প্রচার করার পাশাপাশি একই বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিশেষ করে তাবলিগ জামায়াতকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা যেখানে কমে আসছিল, তাকে উত্তপ্ত করে ধর্মীয় সংঘাত, গৃহবিবাদ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অশুভ পাঁয়তারা হচ্ছে বলেও আমি মনে করি।
আমি মাওলানা আহমদ শফীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পরিকল্পিত, মিথ্যা এবং উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ এবং কঠোর নিন্দা জানাই।
মুন্সীগঞ্জের উল্লেখিত সমাবেশটি ‘ইসলামি মহাসম্মেলন’ শিরোনামে আয়োজন করা হলেও সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আহমদ শফী সাহেব কোরআন-হাদিসবিষয়ক কোনো ওয়াজ-নসিহত বা আলোচনা না করে তিনি তাবলিগ জামায়াতের বিশ্বআমির শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য ও তাবলিগ জামায়াতের ইজতেমা বন্ধের দাবি করলেন। ভবিষ্যতে মাওলানা আহমদ শফী সাহেবকে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে উদ্যোগী হতে এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।
-মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী
শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি, জামিয়াতুল উলূম আল ইসলামিয়া, লালখান বাজার, চট্টগ্রাম