শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন
- স্টাফ রিপোর্টার,তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম। দ্বীনের সহী মেজাজ, সুন্নতের নিখাদ অনুসরণ, তাকওয়ার অবিচলতা, ইলমের একনিষ্ঠতা ও দাওয়াত-তাবলীগের তরবিয়ত ও মেজাজে মুবাল্লিগদের সন্তানরা যেন হক্বানী আলেম হিসাবে বেড়ে উঠতে পারে এলক্ষ্যে বাংলাদেশের ৬৪জেলায় দাওরায়ে হাদীস কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যোগ নিয়েছেন তাবলীগের মুরুব্বীগণ।
তাবলীগ জামাতের চলমান সংকটে কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ও মাদরাসার ছাত্রদের বারবার ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা অনাকাঙ্খিত ও অসমর্থনযোগ্য। তাবলীগের কাজ বন্ধে মাদরাসার ছাত্রদেরকে শিক্ষকরা অহরহ লেলিয়ে দিচ্ছেন। ছোট ছেলেদের দিয়ে বাবা-চাচার বয়সীদের গায়ে হাত তোলা হচ্ছে। নানান জেলায় এসব কাজগুলো কিছু কওমী মাদরাসার রাজনৈতিক শিক্ষকরা করে আসছেন। সর্বশেষে বিবাড়িয়া মার্কাজে মাদরাসার ছাত্রদের কাপনের কাপড় পরিয়ে তাবলীগের সাথীদের মার্কাজে প্রবেশে বাঁধা ও হামলা করানে হয়।
এমনকি এসব অন্যায় গর্হিত কাজে কাকরাইলের উলুমে দীনিয়া মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করা হয়েছে বহুবার। কথিত তাবলীগের নামে সকল ওজাহাতি জোড়ের মূল পুঁজি হিসাবে পড়া লেখা বাদ দিয়ে মাদরাসার ছাত্রদের দিনের পর দিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়া মাদরাসার ছাত্রদের দিয়ে বছরের পর বছর চাঁদা কালেকশন, গ্রামে গ্রামে মুষ্টিচাল কালেকশন, কুরবানীর চামড়ার ব্যবসা করানো ইত্যাদি বিষয়ে দ্বীনদার সচেতন লোকজনের মাঝে চরম অসন্তুষ্টি কাজ করছে। তারা বারবার বলে আসছেন, এসব দারুল উলুম দেওবন্দ ও কওমী স্বকীয়তার খেলাফ কাজ। এসব কখনো আকাবিরে দেওবন্দের আদর্শ হতে পারে না।
এসব কারনেই সারা দেশের কয়েক হাজার মাদরাসার অন্তত ১৫লক্ষ ছাত্রদের অভিভাবক তাবলীগের সাথী ও সমর্থক দ্বীনদার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছিল। তারা নিজেদের সন্তানদের কেউ লাঠিয়াল হিসাবে রাজনৈতিক কাজে কিংবা মিছিল মিটিংয়ে ব্যবহার করুক তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
এ নিয়ে নিজেদের ভিতরে আপোসে আলোচনা করলেও কোন সিদ্ধান্ত বা দিকনিদের্শনা আসছিল না তাবলীগের মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে। বেশ কয়েকবার ত্রৈমাসিক জোড়ে জেলার সাথীরা এই বিষয়টি তুলছিলেন যে, আওলাদে মুবাল্লিগদের সহী এলেম, আমল ও তরবিয়ত কিভাবে হতে পার?
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, লক্ষ লক্ষ কওমী ছাত্রের অভিভাবক তাবলীগের সাথী ও তাদের পরিচালিত শতাধিক মাদরাসাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত ৩০ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হাইআতুল উলইয়ার শুকরানা মাহফিলের প্রস্তুতি বৈঠকে সাদ সাহেবের অনুসারি তাবলীগী মাদরাসাগুলোকে বেফাক থেকে বহিষ্কার ও মাদরাসার রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ঘোষনা দেন বেফাকের মহাসচিব ও জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক। এমন শৈরাচারী ও ধৃষ্টতাপূর্ণ ঘোষনায় ব্যাপকভাবে মর্মাহত হন তাবলীগের মূলধারার হাজার হাজার উলামা মাশায়েখগণ।
এরপর থেকে বাংলাদেশের অসংখ্য মাদরাসা থেকে পিতা নিজামুদ্দিনের অনুসরণে তাবলীগ করার কারণ দেখিয়ে সন্তানকে (ছাত্র) বহিষ্কার করার মতো অন্যায় জুলুমি কাজ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিজেদের সন্তানকে তাবলীগের সাথীরা আলেম বানাতে চান। বড় বড় ডাক্তার, অধ্যাপক, ইঞ্জিনিয়াররা নিজের কলিজার টুকরো সন্তানকে স্কুল কলেজে পড়িয়ে নিজের মতো গড়ে না তুলে, তাবলীগে লাগার পর মাদরাসায় পড়াচ্ছেন। বেফাকের এমন আচরণে তার দারুনভাবে বিষ্মিত ও মর্মাহত হন।
এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে, গতকাল ২২শে নভেম্বর বুধবার সারাদেশের জিম্মাদার সাথীদের নিয়ে কাকরাইলের মুরুব্বীদের জোড় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সারাদেশে জেলায় জেলায় স্বকীয়তা বজায় রেখে কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কাকারাইলের মূলধারা তাবলীগ জামাতের আহলে শুরা মাওলানা মোশাররফ হোসেনের স্বাক্ষরিত এক চিঠি সারাদেশের তাবলীগের সাথীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রত্যেক জেলায় নিজামুদ্দিনের অনুসারী উলামায়ে কেরামের তত্বাবধানে বেশি থেকে বেশি মাদরসা প্রতিষ্ঠা করা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাকরাইলের মুরুব্বী সাভারের উলুমে শরীয়াহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা জিয়া বিন কাসেম তাবলীগ নিউজকে বলেন, বর্তমানে নিজামুদ্দীনের অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে এমন শতাধিক ছোট বড় মাদরাসার তালিকা আমাদের কাছে আসে। আমরা চাচ্ছি প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করে দাওরায়ে হাদীস মাদরাসা ও প্রতিটি থানায় একটি করে ইবতেদায়ী মাদরাসা এবছরের ভিতরেই প্রতিষ্টা করা।
তরুণ আলেমে দ্বীন মাওলানা মু’আজ বিন নূর বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তাবলীগের মুরুব্বীদের পরামর্শে ঢাকায় “দারুল উলুম উত্তরা”র কার্যক্রম শুরু করেছি আল্লাহর মেহেরবানীতে। সারাদেশেই এমন প্রকৃত কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কাজ শিঘ্রই শুরু করা হবে ইনশাআল্লাহ।