শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
মাওলানা হাকীম সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম | আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৪৮ বছরে লাল সবুজের হৃদয়সম প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে কতোটুকো পরিচিত নতুন প্রজন্ম। আজো কেন বিজয়ের অনেক ইতিহাস আমাদের অজানা। কাদের অবহেলায়। এ দায় কার?
কারা ইতিহাসকে চেপে রেখেছিল? আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস! একাত্তরের চেতনার ইতিহাস! ইসলামি স্পীডের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে ঈমানী দাবনলের ইতিহাস। বাম লেখক সাহিত্যিক শিক্ষাবিদরা কখনো চান নি এদেশে আলেমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ছিলেন এটা প্রমানিত হোক। প্রমানীত হোক মুক্তিযুদ্ধের ইসলামি চেতনার স্ফুলিঙ্গ। তেমনিভাবে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রও ইসলামি লেবাস আর লেবেল লাগিয়ে তাদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করেছে। আলেমদের উার দোষ চাপিয়ে নিজেদের বদনামের তকমাকে কিছুটা হালকা করতে?
অপরদিকে অসংখ্য আলেম মুক্তিযোদ্ধা থাকার পরেও আমরা এমন কাউকে পাইনি যিনি আমাদেরকে আলেম মুক্তিযোদ্ধা গল্প,একাত্তরের গল্গগাথা শুনাবেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও খোদ মাদরাসার পাঠ্য তালিকাতে আলেম মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাস নেই। জীবনী নেই। গল্প কবিতা নেই। কোন মোসাদ ষড়যন্ত্রে জাতীয় দিবসকে এতোদিন এড়িয়ে চলা হল মাদরাসার অনুষ্টানিকতা ও উদযাপন থেকে? কেন বিজয়ের সুঘ্রান নিতে দেয়া হয় নি আলেম প্রজন্মকে? কেন লাল সবুজের প্রেমময় পতাকা এতোদিন পরে পতপত করে উড়ানো হল না মাদরাসার আঙ্গিনায়। এতে কি লাভ হল? কার লাভ হল?
কেন আজ মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে মাদরাসার ছাত্ররা অজ্ঞতা বশত কথিত চেতনাধারী ও ঠিকাদারদের সামনে মূখ ছোট করে রাখতে হয়? কাদের অবহেলা ও দন্যতার কুঅল এসব? এখনো কি এনিয়ে আলেমদের ভাবনার সময় হয় নি? নিব দেশে পরবাসির মতো, পরগাছা ভাব নিয়ে আর কতকাল?
স্বাধীনতার ৪৮বছরে খুব পরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বদল হল । কওমী আলেমদের ৯৫ভাগমুক্তিযোদ্ধের পক্ষে কাজ করেও আজ আলেম বলতেই স্বাধীনতা বিরোধী। ইতিহাস বলে দাড়িটুপিওয়ালা রাজাকারের চেয়ে দাড়ি বিহীন প্যন্ট শার্ট পরা রাজাকারের সংখ্যা একাত্তরে বেশি ছিল । কিন্তু এমন করে ইতিহাস বদল হল কার অবহেলা আর অপরাধে? কওমী মাদরাসার পাঠ্য বইয়ে কেন একাত্তরের আলেম মুক্তিযোদ্ধাদেরই তিহাস আজো নেই? বাধা কোথায়? কেন আধুনিক শিক্ষিত তরুনদের মাঝে আলেম মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধেরর ইসলামি চেতনা নিয়ে নুন্যতম কোন ধারনা নেই? কেন নেই? কাদের কারনে নেই? এই দ্বায়ভার কি আমরা এড়িয়ে যেতে পারব? বা এড়িয়ে যাবার আর কোন সুযোগ আছে?
কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রর অসমস্থায়ি কার্যালয় ছিল কওমি মাদরাসা চট্টগ্রামের জামেয়া পটিয়াতে ।
এখানে বসেই আজকের এই দিনে শহীদ জিয়া একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতারঘোষনাপত্র পাঠ করেন। বিনময়ে পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা দানেশ সহ ছাত্র শিক্ষককে পুরিয়েহ ত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা। যেমন পটিয়ার এইমো ল্লাবাড়ি থেকে একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের ডাকএ সেছিল ঠিক এভাবেই আলেম বীর মুক্তিযোদ্ধাও স্বাধীকার আন্দোলনে আলেম জাতীয় নেতাদেরঐ তিহাসিক অবদানগুলোকে আমরা ভুলে গেছি। শহীদ বুদ্ধিজীবী নামের তালিকায় আল্লামা দানেশের নাম নেই কেন?
আলেমরা যে একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনেও চালকের আসনে ছিলেন এটা যেন এপ্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প । এদেশের নারী বীরাঙ্গনা মুক্তিযুদ্ধা, সংখ্যালঘু মুক্তিযুদ্ধা , উপজাতীয় মুক্তিযুদ্ধা , বিদেশি মুক্তিযুদ্ধা , কিশোর মুক্তিযুদ্ধা কতো কিছু নিয়ে কতো ধরনের কাজ হচ্ছে । কিন্তু আলেম মুক্তিযুদ্ধা নিয়ে বন্ধুবর শাকের হুসেন শিবলীর ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’ গ্রন্হ ছাড়া তেমন কোন কাজ হয় নি । কেন কওমি মাদরাসা থেকে একজন শিবলী বের হূে আসতে সাড়ে তিন যুগ অপেক্ষা করতে কল?
ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে আজ অপরিচিত মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দূল হামিদ খান ভাসানী কাগমারী সম্মেলনে স্বাধীনতার প্রথম ইঙ্গিতের কথা ।
মুক্তিযোদ্ধের সময় মুজিবনগর প্রবাসী সরকারের প্রথম বৈঠক হয়েছিল এই মাওলানার সভাপতিত্ব। আওমীলীগ সভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ এর ভাষা ও অধিকার আদায়ের জন্য পার্লামেন্টে গর্জে উঠার কাহিনী।
শহীদ বুদ্বিজীবী মাওলানা ওলীউর রহমান এর লিখিত বঙ্গবন্ধুর ৬দফার পক্ষে শরিয়তের দৃষ্টিতে ৬দফা , ৬দফা ইসলামের বিরোধী নহে , যুক্তির কষ্টিপাথরে ৬দফা , জয়বাংলা ইসলাম বিরোধী শ্লোগান নহে ইত্যাদি প্রচারপত্র মুক্তিযোদ্ধেরঐতিহাসিক জাগরনধর্মী প্রচারনা। কিন্তো এই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকাতে কেন আসেন নি আলেম হিসাবে? কাদের কারনে?
তেলিয়াপাড়া দিবস হিসাবে খ্যাত মুক্তিযোদ্ধের প্রধান সামরিক বৈঠকে একমাত্র বেসামরিক ব্যক্তি হিসাবে মাওলানা আছআদ আলী এম এল এন এর উপস্হিতি ও ঐতিহাসি অবদান । তিনিই ছিলেন সেই বৈঠকের অন্যতম এক কারিগর। তার খাবার খেয়েই মুক্তিযোদ্ধকে সেক্টর কেন্দ্রিক ভাগ করে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল । আর আজ সেই মাওলানারা . . .
খলিফায়ে মাদানী শায়খে লুৎফুর রহমান বর্ণভী , হাফিজ্জি হুজুর, ফখরে বাঙ্গাল , খতিব আমিমুল এহসান ,মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমীর মুক্তযোদ্ধের পক্ষে ঐতিহাসিক ফতোয়া ।জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর রাজনৈতিক দল হিসাব মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে ঐতিহাসিক সমর্থন । যশোর রেল ষ্টেশন মাদরাসাতে আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের গনকবরের ঘটনাবলী ।
কলকাতায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষ ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ ও ফেদায়ে মিল্লাত সৈয়দ আছআদ মদনীর মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে ৩০০টি সমাবেশ করে জনমত তৈরি । পাকিস্তানের মুফতি মাহমুদ জালেম সরকারের রক্তচুক্ষ ভয় না করে বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠক ও মুক্তিযোদ্ধকে সমর্থন । রেফকোর্স ময়দানে ৭মার্চ ভাষনে মাওলানা জালালাবাদীর তেলাওয়াত ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার অবদান । কেন আলেম বিদেশি একাত্তরের বন্ধুদের নাম আড়ালে আবডালে চাপা পড়া।
আলেমদের রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামা প্রককাশ্য একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জনমত তৈরি করে। জমিয়ত নেতা বাহুবলের পীর সাহেব আব্দুল হামিদ রহ এর মুক্তিযোদ্ধের পক্ষ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন । সিলেটের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা আব্দুল্লাহ জালালালাবাদী , নারায়নগন্জের মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারীর স্বপরিবারে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন। হাতিয়া দ্বীপের সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মোস্তাফিজের গল্প । বীরমুক্তিযোদ্ধা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাহসী বীরত্বের কথা।
চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক এর ঐতিহাসিক অবদান । একাত্তরে তার কামরাতেই থাকতেন ৭নং সেক্টর কমান্ডার এম এ জলিল বীর প্রতীক। চরমোনাই মাদরাসাছিল মুক্তিসেনাদের ক্যম্প । রাঙ্গুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানাইসহাক ও মাওলানাআবুল কালাম বাপ বেটার সশস্ত্র লড়াইয়ের কাহিনী । চন্দ্রঘোনার মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা দলিলুর রহমান । রানীর হাটের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মতিউর রহমান । চট্রলার গেরিলা কমান্ডার মাওলানা সৈয়দ ।গঙ্গচড়ার মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা আলিফুর রহমানের বীরত্বগাথা ।রংপুরেরে দুই আলেম বীর বন্ধু কারী আব্দুস সালাম সরকার ও মাওলানা মোহাম্মদ আলীর কৃতিত্ব । নরসিংদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা বশির উদ্দীন । চান্দিনার সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মুখলেছুর রহমানের দুঃসাহসিক অভিযান । স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মি মাওলানা খাইরুল ইসলাম সহ বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য আলেম বীর মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস স্বাধীনতার ৪৫বছরেও আমরা জাতির সামনে তুলে ধরতে পারিনি ।
সেই ইতিহাসকে ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ইতিহাসবিমুখ মাওলানার দল । নিজ দেশে পরবাসি সংখ্যালঘু আজ আলেমরা । ফলে দাড়ি টুপিওয়ালারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একাত্তর সহ শত বছর ধরে বার বার জীবন দিয়েও আজ রাজাকারের তকমা পাচ্ছেন । আধো কি সেই তকমা মুছন করে, আলেম প্রজন্মকে সঠিক ইতাহাস জানাতে কওমির পাঠ্য বইয়ে আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস লিখা হবে?