রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ মবনু | অনেকে মনে করছেন কিংবা কথার কথা বলছেন, আল্লামা সাদ কান্ধলভী আমিরের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেই তো তাবলিগের সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন, তা কি সত্য?
আচ্ছা মনে করুন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দায়িত্ব ছেড়ে বিষয়টির সমাধান করবেন। দাবী উত্তাপনকারিকে দায়িত্ব দেওয়া হলো এমন কাউকে নিয়ে আসতে যার আমির হওয়ার ব্যাপারে কারো আপত্তি নেই, দাবী উত্তাপনকারিরা কি তা এনে দিতে পারবেন? আপনি যদি পারেন তবে নাম উপস্থাপন করুন, দেখি সর্বজনমান্য আমির হওয়ার যোগ্যতা কার আছে?
ঐ ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তি না পাওয়া পর্যন্ত ইমারতের দায়িত্বরত অবস্থায় দায়িত্ব ত্যাগ করা তো সম্পূর্ণ অনুচিৎ। কারণ যে দাবীতে এখানে পরিবর্তণ হচ্ছে তা যদি অনুপস্থিত থাকে তা হলে পূর্বের ব্যক্তি থাকলে সমস্যা কি?
প্রশ্ন হলো, এব্যাপারে বিধান কি? নেতৃত্বের বিধান হলো, বিদ্রোহীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্ব ছাড়া যাবে না। কিছু মানুষের বিদ্রোহের কারণে যদি নেতা তাঁর নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তবে তিনি তার প্রতি আস্থাশীল বা বায়আত দানকারিদের সাথে প্রতারণা করলেন। বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহকে দমন করে দায়িত্ব আদায় করাই সঠিক নেতার বৈশিষ্ট্য। হযরত খুলাফায়ে রাশিদিন (রা.)-দের আমল থেকে এবং গোটা বিশ্বের সফল নেতৃত্বগুলো থেকে তা প্রমাণিত সত্য। চার খলিফার সময়ই বিদ্রোহ হয়েছে। তারা তা দমনের চেষ্টা করেছেন। প্রথম খলিফা বিদ্রোহ দমনে পূর্ণাঙ্গ সফল হয়েছেন। পরের তিনজনই শাহাদত বরণ করেছেন বিদ্রোহীদের হাতে। কিন্তু বিদ্রোহের ভয়ে নেতৃত্ব ছেড়ে পালিয়ে যাননি। বিশিষ্ট্য সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) অথবা হযরত রাসুল (স.)-এর নাতি হযরত হুসাইন (রা.)-এর লোকবল ও শক্তি কম হওয়া সত্ত্বেও বায়আত গ্রহণকারীদের বায়আত ফিরিয়ে দেন নি, বরং নিজেরা জীবন দিয়ে হলেও তাদের বায়আতের মর্যাদা রক্ষা করেছেন।
ইমারত, ইমামত আর খিলাফত ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই তিন ছাড়া ইসলামই অকেজু। যেখানে জামায়েত (তিন কিংবা তা থেকে বেশি লোক) থাকবে সেখানেই আমির প্রয়োজন, নতুবা ইবলিস এবং শয়তান দুটাই এসে যাবে। আমরা নিশ্চয় জানি, ইবলিস হলো হতাশাগ্রস্থ আর শয়তান হলো চক্রান্তকারি। আজাজিলের এই দুই বৈশিষ্ট্য কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়েগেলে ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহপাক আমাদেরকে ইবলিস এবং শয়তান উভয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন।
অনেকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে নেতা বা আমীর নির্বাচনের কথা। আমার প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ কারা? যে আলেমরা আজ আল্লামা সাদ কান্ধলভীর বিরুদ্ধে এক সুরে কথা বলছেন তারা নিজেদের মধ্যকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপগুলো বাতিল করে সংঘবদ্ধ হতে পারছেন না কেন? তারা নিজেরা প্রতিদিন নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়া করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল বা গ্রুপ তৈরি করেন কেন?
যারা তাবলিগের ঐক্যে চান, মঙ্গল চান, তাবলিগের কাজ দেখতে চান তাদের জন্য উচিৎ মাওলানা সাদ সাহেবের আমির মেনে কাজ চালিয়ে যাওয়া। স্মরণ রাখবেন, তাবলিগ কোন মিটিংবাজির নাম নয়। তাবলিগ হলো নিরবে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যাওয়া। যারা ময়দানে তাবলিগ নিয়ে মিটিং-মিছিল করছেন তাদেরকে করতে দিন, আপনারা আপনাদের কাজ চালিয়ে যান। কেউ গালি দিলেও আপনারা গালি দিবেন না, কেউ আঘাত করলেও আপনারা আঘাত করবেন না, কেউ আপনাদেরকে পেশিশক্তি দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দিলেও আপনারা কাউকে মসজিদ থেকে বের করে দিবেন না। তাবলিগের অতীত সফলতা এখানেই। এভাবে চললে আগামীতেও সফলতা আসবে, ইনশাল্লাহ। স্মরণ রাখবেন, প্রতিক্রিয়াশীল মানুষেরা দীর্ঘক্ষণ মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ক্ষুব্ধতা তাকেই ছিবিয়ে খায় যে ক্ষুব্ধ হয়েছে। আপনারা ক্ষুব্ধ হবেন না। আমিরের নির্দেশে নিরবে কাজ করে যান।