বুধবার, ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১০:২৬ অপরাহ্ন
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ | টঙ্গির তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমার আদলে এবারো বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় অক্টোবর মাস থেকে বিভিন্ন তারিখে আঞ্চলিক ইজতেমা অনুষ্টিত হচ্ছে। চলবে মার্চ পর্যন্ত। পরবর্তীতে সারা দেশে একসাথে টঙ্গির ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এটাই তাবলীগের বিশ্ব মার্কাজ ভারতের নিযামুদ্দীনের মুরুব্বি ও তাবকীগের বাংলাদেশের আহলে শুরাদের ফায়সালা। স্থানীয় পর্যায়ে তাবলীগের কাজ কে আরো ব্যাপক গতিশীল করার লক্ষে ঢাকার কাকরাইল মার্কাজ মসজিদের তত্বাবধানে তাবলীগের বিশ্ব আহলে শুরার সিদ্বান্তে এসব আঞ্চলিক ইজতেমা অনুষ্টিত হচ্ছে। কোন কোন জেলাতে নিযামুদ্দীনের বিদেশি আলেমগন উপস্তিত হয়ে বয়ান ও দিক নিদর্শন দিচ্ছেন। জেলা ইজতেমাকে ঘিরে ফরেন জামাত ও বিশেষ “টি আর” জামাত কাজ করছে।
তারুণ্যের উচ্চাস:
জেলা ইজতেমাকে ঘিরে দেখা যাচ্ছে তরুনদের ব্যাপক উচ্চাস। এটা বংলাদেশের জন্য এক নতুন দ্বীনীক্ষেত্র তৈরি করছে। একেকটি ইজতেমার তিন মাস পূর্ব থেকেই চলতে থাকা কাজের দুটি ভাগেই তরুনদের ব্যাপক অংশ গ্রহন থাকে।
এক.মাট তৈরি ও ইন্তেজামি কাজ।
দুই. খুরুজ ও গাশতের মাধ্যমে ঘরঘর দাওয়াত।
মহল্লা ও নানান শ্রেনীর জোড়ে তরুনদের অংশগ্রহন দেখা যাচ্ছে চোখে পড়ার মতো। ইন্তেজামি কাজে মাদারাসা শিক্ষিত ও জেনারেল শিক্ষিত কলেজ ভার্সিটির তরুনদের সেচ্ছাশ্রমে জান মাল লাগিয়ে যৌত্র কাজ এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে পারি। বিশ্ব ইজতেমা থেকে দেশ বিদেশে যে পরিমান খুরুজ ছিল তরুনদের প্রচেষ্টা আর মুরুব্বীদের দোয়া কান্নাকাটির ফলে একেকটি জেলা ইজতেমা থেকে সে পরিমান জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের হচ্ছে।
নানান পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা:
জেলা ইজতেমাকে ঘিরে প্রসাশন সহ সমাজের নানান স্থরের মানুষকে সম্পৃক্ততা করা হয়। কয়েকমাস আগ থেকেই নানান সেক্টরে আলাদা আলাদা জোড় করে সবাইকে মনযোগী করা হয়। ফলে স্থানীয়ভাবে অফিস আদালতে, গাড়িতে, দোকান রেস্তোরায় মূখে মূখে ইজতেমার আওয়াজ উঠতে থাকে। সর্বত্র চলতে থাকে এক অন্যরকম প্রচারনা। যে সব জেলাতে ইজতেমা অনুষ্টিত হবে, সেসব জেলাতে এখন থেকেই বিভিন্ন জোড় ও বিশেষ পরামর্শ সহ নানান কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। কোন কোন জেলাতে মাট তৈরির কাজ আরম্ভ হয়ে গেছে। বিশেষ মেহনতের জামাত প্রতিদিন বের হচ্ছে। ইজতেমাকে ঘিরে বিভিন্ন তবকা (স্তরের) জোড় ও গাশত চলছে। প্রসাশন, সাংবাদিক, ব্যাবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজিবী, গোরাব সহ সকল স্তরের লোকদের কাছে দাওয়াত চলছে। এসব ইজতামতে কোন প্রকার চাঁদা কালেকশন,কিংবা বাহ্যিক প্রচারনা, লিপলেট পোষ্টার, ব্যনার মাইকিং সহ আধুনিক প্রচার যন্ত্র ব্যবহার করা হবে না।
কাজের বিস্তৃতি:
শায়খুল ইসলাম আল্লামা সা’দ কান্দালভি হাফিজাল্লাহু দুবছর পূর্বে যখন গভীর রাতে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমা একাকি ঘুরে রাস্তায় টয়লেটের পাশে মানুষকে মাটিতে কাদায় ময়লায় শুয়ে থাকতে দেখলেন, তখন তিনি আলমি মাশওয়াাতে এই প্রস্তাবটি তুলেন। পাশাপাশি সারা দেশে কাজের গতি বাড়ানোর পরিকল্পনা দিলেন। বাস্তবিক ভাবে দেখা গেছে এতে করে তাবলীগের কাজ জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। ইজতেমার এই ব্যাপকতা তাবলীগের কাজকে বহুগুন আগে বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় প্রসাশন সহ সমাজের সকল সেক্টরে দাওয়াতের কাজের ব্যাপক অংশ গ্রহন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারন পেশাজিবি ও শ্রমজিবী মানুষের মেহনতের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তরুনরা ও সাধারন মানুষ ব্যাপকহারে দ্বীনের মেমেহনতে শরিক হবার সুযোগ পাচ্ছেন।
ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য:
লোক দেখানো বা বেশি লোক জামায়েত করা ইজতেমার উদ্দেশ্য নয়। ইজতেমা কোন সমাবেশ নয়। বরং সারা বছর মেহনত করতে করতে সাথীরা এক জায়গায় সমবেত হন, আবার সেখান থেকে বড়দের পরামর্শে দোয়া মোসাফাহ করে মেহনতের জন্য বেরিয়ে পড়েন। তাই ইজতেমা মূলত আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া এক মেহনতের নাম। এছাড়া প্রত্যেক জেলা মার্কাজের আজাইম (খুরুজ পরিকল্পনার) ভিত্তিতে জেলা ইজতেমা ফায়সালা করেছেন আলমী শুরার পরার্মশে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহলে শুরা। ইজতেমায় মুসল্লীদের জনসমাগমেরর চেয়ে আল্লাহর রাস্তায় বাহির হওয়াকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলা ইজতেমার পূর্বেই নিদৃষ্ট পরিমান (শতাধিক) জামাত বের করতে হবে। কাজের জন্য বাড়িতে থাকতে হবে এমন নীতির পুরো উল্টো, কাবরাইলের মুরুব্বীরা জেলার সব জিম্মাদার সাথীদের পূর্বেই খুরুজ চান। কারন তাদের আল্লাহর রাস্তায় দোয়া কান্নাকাটি ও মেহনতেরদ্বারা গায়বী নুসরত নেমে আসবে। তাবলীগে কাজটিই মূলত সময় ও স্রোতের উল্টো, মখলুক থেকে বেপরোয়া।
তায়াল্লুক মায়াল্লাহ আসল বিষয়:
ইজতোর দ্বারা বৃষ্টির মতো মানুষ দ্বীলের জমিন নরম ও ত্বীন গ্রহনের জন্য উর্বর হয়ে ওঠে। তাই ইজতেমাকে ঘিরে এই সকল মেহনত, মোজাহাদা, কোরবানী, দৌড়ঝাঁপেরর মূল বিষয় খালিকের সাথে, মালিকের সাথে নিজের সম্পর্ককে ঠিক করে নেয়া। এর বদলা কেবল তাঁর কাছে চাওয়া। জেলা ইজতেমা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি জেলার জিম্মাদার সাথীদের কাকরাইল নিয়ে গিয়ে বড়রা কাকরাইলে নিয়ে বিশেষ মোজাকারা করেছেন। দিনে ঘর ঘর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি দাওয়াতের মেহনত, আর রাতে লম্বা নামাজ ও জায়নামাজে বসে রোনাজারি করার প্রতি জোর দিয়েছেন। দিনে বান্দাকে আল্লাহর দিকে ডাকা আর রাতে আল্লাহকে বান্দার দিকে ডাকা। হযরত সা’দ ককান্দালভি দা.বা. বলেন, ইজতেমার মূল মাকসাদ “বান্দাদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি করে দেয়া। তার আগে ইজতেমার আযোজক ও কর্মিদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ও তায়াল্লুক মা’আল্লা ঠিক করতে হবে”। তাই প্রথমে আমাদেরকে সেদিকে মনোযোগী হওয়া প্রযোজন। কাজ করতে করতে যেন মূল মাকসাদটি ভুলে না যাই। আল্লাহ সাথে সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেলে পেরেশানী ছাড়া ইজতেমার ইন্তেজাম হয়ে যাবে। আল্লাহর খাজানা পক্ষে চলে আসবে। আসমান থেকে গায়বী মদদ নামতে শুরু করবে।
হে আল্লহ, আগত বিশ্ব ইজতেমা সহ দদেশ বিদেশের প্রতিটি ইজতেমাকে কবুল কর। কামিয়াব ও ভরপুর করে দাও। সাথে সাথে তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ককে ঠিক করার তাওফিক দান কর। আমিন ।