শনিবার, ১০ এপ্রিল ২০২১, ১০:১৮ অপরাহ্ন
ষ্টাফ রিপোর্টার, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম
উত্তরা র্যাব-১ সংলগ্ন বাইতুস সালাম মাদরাসা গতকাল রাত ১১টার দিকে হঠাৎ করে ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে। মাদরাসার ছাত্ররা প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হাই এর বাসা ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকে।
এ নিয়ে টান টান উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় লোকজন ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে উত্তরা মডেল থানার পুলিশ মাদরাসায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
প্রসাশনের পক্ষ থেকে বাধ্য হয়ে রাত ১১টায় সকল আবাসিক ছাত্রদের সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে করে বিভিন্ন জেলার ছোট মাদরাসার আবাসিক শিশুরা আতংকিত হয়ে পড়ে। এত রাতে তারা কেথায় যাবে? কার কাছে যাবে?
ঘটনার বিবরণে যায়, মুহতামিম মুফতি আব্দুল হাই নিযামুদ্দীন অনুসারী হওয়ায় কোন ছাত্র-শিক্ষককে ওজাহাতি জোড় সহ কোন উগ্র ও সহিংস আন্দোলনে শরীক হতে দিতেন না। এ নিয়ে সারা বছর ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। আজ বার্ষিক পরীক্ষার শেষে ছুটির প্রাক্কালে হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মাহমুদের নেতৃত্বে একদল শিক্ষক ছোট ছোট ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তুলে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় এক ছাত্রের অভিভাবক তাবলীগ নিউজ বিডি ডটমককে ফোন করে এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানান এবং উগ্র ছাত্রদের আচরণে তিনি মর্মাহত হন। আফসোস করে বলেন, একের পর এক এগুলো কী হচ্ছে মাদরাসাগুলোতে? আমাদের বাচ্চাদেরকে হুজুররা এসব কী শিখাচ্ছেন? এজন্য কি আমরা সন্তানদেরকে মাদরাসায় দিয়েছিলাম? এতরাতে ছাত্ররা কোথায় যাবে? এখানেতো প্রচুর শিশু-কিশোর আছে। এসবতো আগে কলেজ ভার্সিটিতে হত, এখন এসব কওমী মাদরাসাতেও হচ্ছে।
বাইতুস সালামের প্রাক্তন ছাত্ররা উক্ত ঘটনায় চরম মর্মাহত হয়েছেন। তাদের দাবী, উস্তাদদের ব্যপারে ছাত্রদের এমন হিংস্র আচরণ অনেক ভয়ংকর কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। যা নিতান্তই উদ্বেগজনক। কওমি অঙ্গনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। প্রশ্ন উঠছে, হালে কোন পথে চলছে কওমি অঙ্গন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার একজন ষ্টাফ বলেন, সূচনালগ্ন থেকেই আমরা খুব চাঁপের মধ্যে আছি। পাশেই র্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয় থাকায় মাদরাসার উপর প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কড়া নজরদারী থাকে সবসময়। মাদরাসায় কিংবা মসজিদে বড় কোন আয়োজন করতে হলে র্যাব-১ কতৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এমন স্পর্শকাতর এলাকায় এধরণের উগ্রতা প্রদর্শন আমাদেরকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। ‘বড় হুজুর’সহ আমরা সবাই মহাচিন্তিত।
উক্ত মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র মাওলানা মু’আয বিন নূর আফসোস করে বলেন, গত দু’বছর আগেও বাংলাদেশে সবচেয়ে সভ্য, ভদ্র ও আদব কায়েদায় শ্রেষ্ঠ ছিলো এই কওমি অঙ্গন। কিন্তু শিক্ষকরাই আজ তাদের ছাত্রদেরকে বেয়াদবীর প্রশিক্ষণ দিয়ে চরম বেয়াদব বানিয়ে এবার নিজ ছাত্রদের দ্বারাই লাঞ্চিত হতে শুরু করেছেন। এগুলো ভিন্ন কিছু নয়। এসব তাদের হাতের কামাই। পরের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেখানে নিজেকেই পড়তে হয়।
মু’আয বিন নূর আরো বলেন, আবু জেহেল একবার নিজের ঘরের সামনে একটি বড় গর্ত খুঁড়ে ঢেকে রেখেছিলো। যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাওয়াত দিতে আসলে সেই গর্তে পড়ে যান। নাঊযুবিল্লাহ। কিন্তু সেদিন রাসুল দাওয়াত দিতে না আসায় সে অসুস্থতার সংবাদ দিয়ে একজন লোককে রাসূলের নিকট পাঠায়। রাসুল আলাইহিস সালাম যখন তাকে দেখতে আসছিলেন তখন সে ঘরের ভিতর থেকে দলবল সহকারে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ছিলো। সবাই রাসুলের গর্তে পড়ার দৃশ্য উপভোগ করতে অপলক নয়নে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু কাছাকাছি আসার সাথে সাথে জিবরাইল আলাইহিস সালাম সতর্ক করে দিলে রাসুল ফিরে যেতে থাকেন। তখন আবু জেহেল তড়িঘড়ি করে রাসুলকে পিছন থেকে ডাকতে গিয়ে গর্তের কথা ভুলে যায়। ফলে নিজের গর্তে নিজেই গিয়ে পড়ে। লজ্জা ঢাকতে তার অনুসারীরা হাত ধরে বহুবার টেনে তুলতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। অবশেষে রাসুল এসে যখনই হাত ধরেন তখনই আবু জেহেল উঠে আসতে সক্ষম হয়।
আজও যারা বিশ্ব আমীর আল্লামা সাদ কান্ধলভীর বিরুদ্ধে ছাত্রদেরকে লেলিয়ে দিয়ে বেয়াদবীর গর্ত খুঁড়েছিলো তারাই আজ নিজ ছাত্রদের বেয়াদবীর গর্তে পড়ে লাঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ব আমীর আল্লামা সাদ কান্ধলভীকে আল্লাহ তা’আলা ইলহাম/কাশফের মাধ্যমে এই বেয়াদবির কথা জানিয়ে দিলে তিনি এ বছর বাংলাদেশে আসার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও আসেননি। এবার ওজাহাতি হযরতগণ নিজেদের খুঁড়া গর্তে নিজেরাই পড়তে শুরু করেছেন। এই গর্ত থেকে একমাত্র আমীরুল মু’মিনীন আল্লামা সাদ কান্ধলভী ছাড়া আর কেউ হাত ধরে টানাটানি করেও তুলতে পারবে না। এভাবেই ওজাহাতিরা প্রায়শ্চিত্ত ও খেসারত দিতে থাকবে অনন্তকাল।