বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০১:২২ পূর্বাহ্ন
সাভার প্রতিনিধি, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম
মারকাজুল উলুম আশ-শরইয়্যাহর মুহতামিম, প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ও মুবাল্লীগে ইসলাম আল্লামা জিয়া বিন কাসিম বলেছেন, রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আসলে কি চাচ্ছেন তার বন্দার কাছে। আল্লাহ পাক চাচ্ছেন রমজানের রোজার মাধ্যমে বান্দা তাকওয়াপূর্ণ জীবন লাভ করুক। তাকওয়া কী? তাকওয়া শব্দটি আরবী কুউওয়াতুন থেকে নির্গত। অর্থ শক্তি। তাকওয়া অর্থ সেই মানসিক শক্তি অর্জনকে বুঝায় যার মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দাহ পাপ পঙ্কিলতার পরিবেশে থেকেও পাপের হাতছানি থেকে বাঁচতে পারে। নির্জন স্থানে কেউ আমাদেরকে না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন। এই যে সামর্থ সুযোগ থাকার পরেও আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এর নাম তাকওয়া।
গতকাল সাভারস্থ বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের জুমআার বয়ানে উপরোক্ত কথা বলেন আল্লামা জিয়া বিন কাসিম।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ সময় আমরা সিয়াম পালন করি। ইচ্ছা করলে লুকিয়ে হলেও আমরা খাবার খেতে পারি। কোন একজন পানিতে ঢুব দিয়ে পানি পান করতে পারে। সন্ধ্যা যখন ঘনিয়ে আসে, লোভনীয় সব খবার সামনে নিয়ে আমরা নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষায় থাকি। একটু আগেও আমরা খাবার গ্রহন করিনা। এরই নাম তাকওয়া। আবার সেহরীর সময় শেষ হলে, খাবার খাই আর নাই খাই, পেটে যত ক্ষুধাই থাক আমরা আর খাবার খাই না। এটিই তাকওয়ার প্রশিক্ষণ।
মাওলানা জিয়া বিন কাসিম আরো বলেন, মানুষ দুটি অঙ্গের মাধ্যমে সবচে বেশি গুনাহে লিপ্ত হয়। এক, মুখ, দুই, লজ্জাস্থান। মাহে রামজান আমাদেরকে এই দুটি অঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার প্র্যাকটিস শেখায়।
দিনের বেলায় অন্য সময়ে হালাল খাবার খাওয়ার অনুমতি রয়েছে। অনুমতি রয়েছে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে হালাল উপায়ে একত্রবাসের। কিন্তু মুমিন বান্দাহ আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে এই হালাল কাজটি পরিত্যাগ করে এই রমজান মাসে। এরই নাম তাকওয়া। এভাবে যে লোক আল্লাহর নির্দেশে হালাল কাজটি ছেড়ে দিতে পারে, তার জন্য চিরস্থায়ী হারাম কাজ পরিত্যাগ করা কতোইনা সহজ।
যে ব্যক্তি পানি পান করা ছাড়তে পারে তার জন্য মদ ছেড়ে দেওয়া কি খুব কষ্টের? যে লোক হালাল খবার ছেড়ে দেয় আল্লাহর সন্তুষ্টির ভয়ে সেতো সহজেই সুূদ ঘুস অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পত্তি গ্রাস করা ছেড়ে দিতে পারে। যে বান্দাহ আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্থীকেও ছুয়ে দেখেনা, সেতো অনায়সেই ব্যাভিচার ছেড়ে দিতে পারবে। এই প্র্যাকটিস সারা মাস যাবত আমরা মুমিনরা করে থাকি। এই শিক্ষাটা যদি মুমিন বান্দাহরা অাত্মস্থ করতে পারে তাহলে একটি তাকওয়াপূর্ণ ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গঠিত হবে। মানুষ দুনিয়াতেই ফিরে পাবে জান্নাতি পরিবেশের নমুনা।
অাল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অজর্নের জন্য বহুবার মানুষকে তাগিদ প্রদান করেছেন পবিত্র আল কুরআনের মাধ্যমে। যথা বলা হয়েছে- (হে ইমানাদারগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃতুবরণ করো না) সুরা আল ইমরান-১০২) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- (নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত সে যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খোদাভীরু)। অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে আগামী দিনের জন্য কি প্রস্তুত করেছে, আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত) সুরা হাশর-১৮। অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও) সুরা তওবা-১১৯। অন্য আয়াতে রয়েছে- (নিশ্চয়ই আল্লাহ যারা মুত্তাকী এবং যারা সৎকর্মপরায়নশীল তাদের সাথে রয়েছেন) সুরা নাহল-১২৮। অন্য আয়াতে রয়েছে- (তোমরা সৎ ও তাকওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা কর তোমরা পাপ ও সীমালংঘনের কর্মে সহযোগিতা করনা তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা) সুরা মায়েদা-২। অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে ইমানদারগণ তোমরা অাল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার। সুরা বাকারা-১৮৯। অন্য আয়াতে রয়েছে- (হে নবী আপনি আল্লাহকে ভয় করুন এবং আপনি কাফের ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী। সুরা আহযাব-১। এছাড়া ও অসংখ্য আয়াত রয়েছে যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা মানব জাতি এমন কি নবীকেও তাকওয়া অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যা দ্বারা তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা বুঝা যায়। কেন না তাকওয়া অর্জন ছাড়া একজন মানুষ মুমিনই হতে পারে না।
তাকওয়া দ্বারা মানুষের গোটাজীবন পরিচালিত হয়। তাই যার মাঝে তাকওয়া নেই সে তার গোটা জীবন কুফরী অবস্থায় অতিবাহিত করে। পক্ষান্তরে যার মাঝে তাকওয়া রয়েছে তার গোটাজীবন পরিচালিত হয় মহান আল্লাহ প্রদত্ব বিধান ও রাসূল (সা:) প্রদর্শিত আদর্শ মোতাবেক। তাই মানুষকে জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্ব প্রথম তাকওয়া অর্জন করতে হবে। কেননা তাকওয়া দ্বারাই প্রতিটি মানুষ স্ব-মহিমায় অবস্থান করতে পারে।