বুধবার, ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১২ অপরাহ্ন
সিমিয়র নিউজরুম এডিটর, তাবলীগ নিউজ বিডিডটকম|আজ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি পৃথক ওজাহতি জোড় অনুষ্টিত হল। একদিকে জেলা ইজতেমাতে প্রসাশনের বাঁধা অপর দিকে দুটি প্রধান নগরীর প্রানকেন্দ্রে বাঁধাহীন তাবলীগের নামে এমন জোড় অবাক করছে শান্তিকামী মুসল্লী ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের।
গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তাবলীগের চলমান সংকট নিরসন ও বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বৈঠকে নির্বাচনের আগে কোন ইজতেমা ও জোড় না করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান মিডিয়াকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ। একইসঙ্গে তাবলিগের জামাতের মধ্যে বিরোধও রয়েছে। এসব বিবেচনায় তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমা আপাততো স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাবলিগের দুই পক্ষই কোন জোড় (জমায়েত), ওজহাতি জোড় (স্পষ্টকরণ জমায়েত) করতে পারবেন না। ”
এতে জেলা ভিত্তিক ইজতেমার কথা স্পষ্ট ছিল না বিধায় পূর্বের নির্ধারিত তারিখ বিভিন্ন জেলা ইজতেমা শুর হয়।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশের ৬জেলায় অনুষ্ঠিত তাবলীগের ইজতেমা করতে পুলিশের প্রচন্ড বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় তাবলীগের সাথীদের। প্রসাশনের পক্ষ থেকে একটি দাবী ছিল নির্বাচনের আগে কোন প্রকার জমায়েত করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের নিষেধ। মৌলভীবাজার, চাদপুর,গাজিপুর,নোয়াখালীতে ইজতেমা করতে গিয়ে তাবলীগের সাথীদের সাথে পুলিশের আগ্রাসী আচরণ লক্ষ করা যায়। এনিয়ে এসব জেলায় মুসল্লীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ স্থানেই প্রসাশনের চাপে নিদৃষ্ট সময়ের আগেই মোনাজাত করে ইজতেমা শেষ করতে হয়।
কিন্তু ঠিকই আজ দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক দুটি বৃহৎ ওজাহাতি জোড় তাবলীগের অপর পক্ষের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে জমিয়তুল সালাহ ময়দানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার তাবলীগের ওজাহাতি জোড়ে হাজার হাজার মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক অংশ নেন।এতে প্রধান অথিতি ছিলেন হেফাজতের আমীর মাওলানা শাহ আহমদ শফি।
দুপুর ১টায় রাজধানীর কয়েকটি থানার মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে অপর আরেকটি তাবলীগের ওজাহাতি জোড় অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর বারিধারা মাদরাসার মাঠে। এটি রাত পর্যন্ত চলছে। এতে প্রধান অথিতির ব্যক্তব্য রাখেন মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ চুড়ান্ত না করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুটি ওজাহাতি জোড়েই বিশ্ব ইজতেমার পূর্বের তারিখের কথা পুনরায় ঘোষনা করা হয়।
আজকের দুটি ওজাহাতি জোড়ের পর নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সরকারী সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রসাশনের কোন প্রকার বাঁধা ছাড়া কিভাবে দেশের দুটি প্রধান শহরে এতবড় ওজাহাতি জোড় অনুষ্ঠিত হল। যেসব জোড়ে অপরপক্ষের সমসলোচনা, বিরোধীতা, আর নানান হুমকী ধমকী দেয়া হয়। নির্বাচনের আগে এমন সম্মেলনের সুযোগ দিলেও ইজতেমায় যেখানে ঈমান আমল ও নামাজ রোজার কথা বলা হয় তা কেন বন্ধ করে দিচ্ছে প্রসাশন?
চাদপুর ও মৌলভীবাজারে প্রসাশন আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েও পরে বাঁধা দেয়। অপর দিকে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই চলছে প্রসাশনের কোন প্রকার বাঁধাহীন ওজাহাতি জোড়।
এব্যাপারে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেম,সাভারের উলমুশ শরীঈয়া মাদরাসার মুহতসমিম মাওলানা মুফতী জিয়া বিন কাসেম এই প্রতিবেদককে বলেন, “তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংঘ । এই সংঘের বিশ্ব মারকাজ বা সদর দফতর ভারতের রাজধানী দিল্লির নিযামুদ্দিনের বাংলাওয়ালি মসজিদ এবং নিযামুদ্দিন মারকাজের বাংলাদেশের শাখা বা বাংলাদেশের মারকাজ রাজধানী ঢাকার কাকরাইল মসজিদ । বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের মূলধারা অর্থাৎ বিশ্ব মারকাজ নিযামুদ্দিন থেকে বিচ্যুত হয়ে একটি বিভ্রান্ত এবং বিদ্রোহী গ্রুপ বাংলাদেশ তবলিগ জামাতকে ভাঙ্গনের উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য দিয়ে তবলিগ জামাতের সাথে সম্পর্কহীন কিছু রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের প্রত্যক্ষ মদদ এবং সহযোগিতায় একটি অস্থিরতা তৈরি করেছে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং পবিত্র এই মহতী কার্যক্রমকে বিতর্কিত প্রকারন্তরে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছে এবং মূলধারার তবলিগ অনুসারীদের তাদের স্বাভাবিক ধর্মীয় কর্মসূচি এবং কার্যক্রম চালাতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাধা দান করছে। আর নিজেরা আইনকে অমান্য করে কিছু রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে এসব প্রোগ্রাম করে দেশকে ক্রমশ ধর্মীয় সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে প্রসাশনকে এখনি সর্তক হতে হবে।
কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বী মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সকল ধর্মাবলম্বী বাধাহীনভাবে ধর্মচর্চা ও অনুসরণ করবেন- এটি সংবিধানের বিধান এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যও বটে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৪১ এর ১ (ক) তে সুস্পষ্টভাবে আরও উল্লেখ আছে ” প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে। কিন্তু আমাদের ইজতেমাগুলোতে বাঁধা দিয়ে আমাদের প্রতিপক্ষ যারা তাদেরকে বাধাহীন ওজাহাতি জোড় করতে দেয়া নানান প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। ইজতেমায় বাঁধা দেয়া মৌলিক অধিকার, ইনসাফ, ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। আমরা মনে করি বিশেষস্থান থেকে প্রসাশনকে ভুল মিসগাইড করে একটি চক্র এসব কাজ করছে। সরকারকে নিজেদের ভাবমূর্তিরক্ষায় সেই চক্রটি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সবার সমান নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশা করি।