রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪২ অপরাহ্ন
দাওয়াত ও তাবলীগের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি নিজেকে এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার যোগ্য মনে করি না।
বেশ কয়েক বছর ধরে আমি আমার ঠোঁটে নিরবতার মোহর এটে দিয়েছি। আমরা বংশগতভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের জন্য উৎসর্গী। আমার বংশের প্রতিটি ব্যক্তির রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাবলীগের ভালোবাসা মিশে আছে। আজ আমি এতটুকুই বলতে চাই, আল্লাহর ওয়াস্তে এই দাওয়াতে তাবলীগের হেফাজত ও দীর্ঘস্থায়িত্বের দু‘আয় নিমগ্ন হোন। আল্লাহর ওয়াস্তে দলাদলি বন্ধ কর। দারুল উলূম দেওবন্দে আমাদের আকাবিরদের মাঝে যখন মতানৈক্য হয়েছিলো আমি তখন মদিনা শরীফে পড়ালেখা করি। ছুটিতে যখন বাড়িতে আসতাম, মূর্খতাবশত কিছু কথা জবান দিয়ে বের হয়ে যেত। তখন আমার আব্বাজান অত্যন্ত কঠোরভাবে আমাকে শাসন করে বলতেন- দেখো বড়দের মতানৈক্যের মাঝে ছোটদের নাক গলাতে আসা একেবারে অনুচিত। এটা বড়দের ব্যাপার, তারা নিজেরাই এর সমাধান করে নিবেন। ছোটদের কোন পক্ষের সমর্থন বা বিরোধিতা করা মোটেও উচিত হবে না। আমরা এটাই শিখেছি।
এ সব হযরত সবাই আমাদের আকাবির। আমাদের মাথার মুকুট। আর তাদের থেকে আমরা ঈমান ও আকিদার দুগ্ধ পান করেছি। তাদের বিষয়ে কিছু শুনা বা দেখা আমাদের জন্য দুঃখের বিষয়।
সুতরাং বন্ধুগণ! এ ব্যাপারে কথা বলতে দয়া করে আমাকে কেউ বাধ্য করবেন না। একটা বিষয় নিয়ে আমার একটা ধারণা হচ্ছে। আমার এই ধারণাটি যেন ভুল প্রমাণিত হয়। আমরা পরস্পর এ ব্যাপারে খুব আলোচনা সমালোচনায় খুব তৎপর। কিন্তু কেউ কি একদিন এ হালতের জন্য রোজা রেখেছি? সদকাহ করেছি? কোনো ত্যাগ স্বীকার করেছি? আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলেছি? এর দ্বারা বুঝা যাবে আমাদের এই পেরেশানি আসল, নাকি ভেজাল। মতবিরোধ সৃষ্টি করতে আমরা স্বাদ খুঁজে পাই। এটা আমাদের চরম এক বদ খাসলতী যা শয়তান আমাদেরকে ইসলাহের নামে করাচ্ছে। সুধারণা, অপবাদ আরোপ করা। শয়তান আমাদের দ্বারা জিনা করাতে পারে না, জুয়া খেলাতে পারে না, মদ খাওয়াতে পারে না। কিন্তু মুমিনের অসম্মানি করা সকাল-সন্ধ্যা ধর্মের নামে গীবত করা ইত্যাদি শয়তানী কাজ আমাদের দ্বারা করিয়ে নিচ্ছে।
যদি দরদ থাকে তাহলে এত কথার দরকার নেই। রোযা রাখ। সালাতুল হাযত পড়ে কায়মনো বাক্যে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে বলুন, হে আল্লাহ তুমি এই কাজকে হেফাজত করো। এই কাজের ধারক-বাহক সমস্ত মুরব্বীদেরকে হেফাজত কর। হে আল্লাহ এই কাজকে উম্মতের ঐক্যের মাধ্যম বানাও। উম্মতের মতানৈক্যের কারণ না বানাও। ভাই, নিজের কাজে মনোযোগী হও। কে জানে আল্লাহ তাআলার ফয়সালা কী? আল্লাহর সব ফায়সালা ন্যায়সঙ্গত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ হয়ে থাকে। আমরা বুঝি বা না বুঝি। আল্লাহ তাআলা চির অমুখাপেক্ষী। কারও কোনো বিষয়ে আল্লাহ পরোয়া করেন না। আল্লাহ তো আল্লাহ-ই। প্রত্যেকের নিজের ফিকির করা উচিত। আমাদের কী হবে? মৃত্যু এসে গেলে কী আমরা মুক্তি পাবো?
আল্লাহ কী আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন তোমরা তাবলীগকে বিবাদ থেকে রক্ষা করেছো? নাকি একথা জিজ্ঞাসা করবেন যে, তুমি কতবার চোখের জিনা করেছো? কেন তোমরা মিথ্যা বলেছো? কেন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়েছ?
সুতরাং ভাই এ ব্যাপারে বড় কাউকে জিজ্ঞাসা করুন। আমি এ ব্যাপারে উপযুক্ত নই। এইজন্যেই আমি নিরবতার পন্থা অবলম্বন করছি। লোকজন আমার কিছু পুরোনো ভিডিওকে এডিট করে আগপিছু বাদ দিয়ে ভিডিওক্লিপ ইউটিউবে আপলোড করে বলছে, মাওলানা সাজ্জাদ নোমানী তাবলীগ ও নিজামুদ্দিনের ব্যাপারে এই বলেছেন। অথচ এ ব্যাপারে আমি আজ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করিনি।
সেই দিনের কথা আমার আজও মনে আছে এবং চিরদিন মনে থাকবে যে, আমি যখন অসহায়-গরীব তালবে ইলম হয়ে মারকাজ নিজামুদ্দীন যাই তখন আমার মনের অবস্থা যে কী হতো তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। আমার মনে হতো যখন আমি দিল্লী স্টেশনে নামবো জুতা পরে নামবো না। এযে আমার প্রিয়তমের শহর। আর যখন মারকাজ নিজামুদ্দীনের পাশের রাস্তায় বাস থেকে নামতাম প্রায়ই। এমন হতো যে, কোন না কোন অজুহাতে জুতা খুলে আমি ব্যাগে রেখে দিতাম। কেননা যে শহরে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. হেঁটেছেন সেখানে আমি জুতা পরে হাঁটতে পারবো না। যখন মসজিদের সিঁড়িতে উঠতাম তখন আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তো। আর যখন আমার শায়েখ হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.কে দেখতাম তখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলতাম। আমার জীবনের অনেক স্মৃতি আছে। এই জন্য আমি এই মারকাজ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজের হিতাকাক্সক্ষী মনে করি এবং তাদের মাঝে কোন মতানৈক্য সৃষ্টি করতে প্রস্তুত নই।
সবার কাছে এই আবেদন থাকবে মনটাকে উদার করুন। আমলে মশগুল থাকুন, দলাদলি পরিহান করুন। বহু বড় বড় লোক এই সমস্যায় পড়ে গেছে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
সবার কাছে এই আবেদন থাকবে মনটাকে উদার করুন। আমলে মশগুল থাকুন, দলাদলি পরিহান করুন। বহু বড় বড় লোক এই সমস্যায় পড়ে গেছে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
ভারতের আল ফুরকান সম্পাদক, প্রিন্সিপাল ও পীর জুলফিকার নকশবন্দীর খলিফা শায়েখ খলিলুর রহমান সাজ্জাদ নোমানীর বক্তৃতা ভাষান্তর করেছেন মুফতি আবদুস সালাম