শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, তাবলীগ নিউজ বিডি ডটকম:
শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ আহমদ শফি হাফিজাল্লাহু আমার উস্তাদ। আমাদের সিপাহসালার। এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। হাদীস চর্চায় তার খেদমত ও অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে তার নেতৃত্বে হেফাজত ইসলামের নাস্তিক ব্লগার বিরোধী আন্দোলন এদেশের গনমানুষের হৃদয় স্ফুলিঙ্গের মতো ঈমানী চেতনার এক দাবানল ছড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দু:খের বিষয় তিনি হেফাজতের আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের আলেম সমাজকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তার চারপাশের সার্থান্বেষী একদল তগুতের চাটুকারদের গাদ্দারীর কারণে ঠিক ততোটা নিচে নামিয়ে দিয়েছিল উলামায়ে কেরামের ইজ্জত সম্মানকে। আর এবার সরাসরি ঐ চিহ্নিত চক্রটি হযরতকে ভুল তথ্য দিয়ে তাকে ও ইসলামকে কলংখিত করার মিশনে মাঠে নেমেছে।
সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের এক ইসলামি সম্মেলনে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাল্লাহুর একটি বক্তব্যকে ঘিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কয়েকদিন ধরে দেশের সকল জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, টিভিতে সংবাদ শিরোনাম ও ভিডিও প্রচার হয়ে আসছে। তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমির হজরত মাওলানা সা’দ কান্ধালভী (দা. বা.)-সহ তাবলীগের কার্যক্রম নিয়ে হযরতের অসতর্কতা মূলক বক্তব্য শুনে বিষ্মিত দেশের চিন্তাশীল আলেম সমাজ। উল্লেখ্য যে, বিগত ২৬ জুলাই, ২০১৯ ইংরেজি তারিখ শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি সোনারং মাঠে আয়োজিত ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উস্তাদুল উলামা, অতিশয়পর বৃদ্ধ বুজুর্গ আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাল্লাহু বলেন, “তাবলীগের সাথীরা ৫ হাজার আলেম-উলামাকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সা’দ মৌলভীও না, হাফেজও না, আলেমও না। সে কিচ্ছু না। সে বারবার ইহুদীদের কাছে যায়। তাদের সাথে আমাদের কোন আপোষ নাই” ইত্যাদি।
আসলে হুজুরের অসুস্থতা ও বাধর্ক্যের সুযোগে চারপাশের কিছু লোক ভুল তথ্য দিয়ে এসব মিথ্যা কথা এই মহান ব্যাক্তিকে দিয়ে বলিয়েছে। যায়,দুঃখজনক। বাস্তবতা হলো, গত ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ইংরেজি তারিখে টঙ্গীর ময়দানে মাওলানা যোবায়েরপন্থী ও পাকিস্থানের অনুসারী (তথাকথিত আলমী শুরা পন্থী)-দের হামলায় দুইজন তাবলীগের মূকধারার সাথী শহীদ হন। টঙ্গীর ময়দানে তাবলীগের জোড়কে বানচাল করতে মাদ্রাসার কোমলমতি শিশু-কিশোরদের লাটিসোটা দিয়ে ব্যবহার করা হয়। টয়লেটের ছাদ থেকে বাবা চাচার বয়েসী রাস্তায় অবস্থান করা তাবলীগওয়ালাদের উপর ছাত্রদের দিয়ে ইট পাটকেল মেরে রক্তাক্ত ও আহত করা হয় নির্মমভাবে। বরং সাথীরা তাদের হেফাজত করে বুকে আগলে ছাত্রদের মাঠ থেকে বের করে দেয়ার অসংখ্য ভিডিওর রয়েছে। যা সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে। তারপরেও সেই সত্যকে আড়াল করে সারা দেশে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয়া হয়। শাপলা চত্তর আহতদের ছবি আরও রোহিঙ্গার মুসলিম নিয়ের্যাতনের ছবি সাঁটিয়ে মূলধারার আলেমদের ফাঁসি চেয়ে ভুয়া পোষ্টারের চাপিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও গত ১৯ মে, ২০১৯ ইংরেজি তারিখে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী থানার একটি মসজিদে তাবলীগ জামাতের সাথীদেরকে আসতে দেয়ার জের ধরে স্থানীয় তাবলীগকর্মী আবদুর রহিম রাজনের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে জুবায়েরপন্থীরা। সারাদেশে মসজিদে মসজিদে তাবলীগের কাজে বাধা সৃষ্টি ও জেলা ইজতিমা বন্ধ করতে বরাবরই সংঘর্ষিক রূপ তৈরি করে বাংলাদেশকে ধর্মীয় গৃহবিবাদ ও গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তারা।
হাটহাজারীর হুজুরকে তার সরলতা ও বার্ধক্যের সুযোগে এসব বিষয়কে সম্পূন্ন আড়াল করে ভুল তথ্য দিয়ে অসত্য বক্তব্য যারা দিতে বাধ্য করেছে, এতে করে তাদের উগ্রপন্থা আরো ব্যাপক হতে পারে এবং চলমান সংঘাতকে আরো উষ্কে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে! তারা শেষ পর্যন্ত তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চিত্রায়িত করতে এ-ই মহান বুজুর্গকে ব্যাবহার করতেও একটি কন্ঠুত ও লজ্জিত হলো নাম। আফসোস! শত আফসোস!!
অথচ মাওলানা সা’দ কান্ধলভী দিল্লির প্রাচীনতম ও সুবিখ্যাত দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাশিফুল উলুম মাদ্রাসায় দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে শায়খুল হাদীস ও মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং মাওলানা সা’দ কান্ধলভী গত প্রায় তিন যুগের বেশি সময় ধরে আলমী মারকাজ নিজামুদ্দিন (বাংলাওয়ালী) মসজিদে খতমে তারাবি নামাজ পড়াচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, শায়খুল হাদীস আল্লামা সা’দ কান্ধলভী যদি আলেম না হয়ে থাকেন, তাহলে প্রতিদিন সহিহ বোখারী শরীফ ও সহিহ তিরমিযী শরীফের দরস (অধ্যাপনা) প্রদান করছেন কিভাবে? হাফেজ না হলে কিভাবে তারাবির নামাজ নিজামুদ্দিন মার কাজে একাই পড়ান রমজানুল মোবারকে। একজন প্রবীণ আলেম আল্লামা আহমদ শফী দা.বা. কে সূর্যের মতো স্পষ্ট এমন সত্যের ব্যপারে কারা ভুল তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করাতে চায় তাদের চিহ্নিত করা সময় ও ঈমানের দাবী।
এছাড়াও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতিমা ময়দানে শায়খুল হাদীস আল্লামা সা’দ কান্ধলভী বিগত ২২ বছর যাবত কুরআন হাদীস থেকে বয়ান করে আসছেন। এখন কেন কথিত আলমী শুরার পাকিস্তানী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তার ব্যাপারে আল্লামা আহমদ শফী হাফিজাল্লাহু কে ব্যাবহার করে নানান অপবাদ বাজারে ছড়ানোর যারা চেষ্টা করছেন, তারা মূলত মৃত্যুর আগে পাহাড়ের মতো একটা বিশাল ব্যক্তিত্বের অজর্নকে ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছেন। মিথ্যা, অপবাদ ও গুজব ছড়ানোর হীন কাজে যারা আল্লামা আহমদ শফি হাফিজাল্লাহুকে ব্যাবহার করছে তারা খোদ হাটহাজারীর হুজুরের দুষমন। তারা আল্লামা আহমদ শফি হাফিজাল্লাহুর মহীরুহের মতো জীবনে কালিমা লেপন করার হীন চেষ্টা করছে। তার জবান দিয়ে মিথ্যা কথা, অপবাদ ও গুজব ছড়িয়ি দিয়ে তাকে কলংখিত করার ও বাংলাদেশে গৃহ বিবাদ, সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। প্লীজ আরও যাই করুন, মৃত্যুর আগে আমাদের উস্তাদ, শায়েখ, এই মহান বুজুর্গকে কলংখিত করবেন না। দোহাই আপনাদের কাছে। আপনাদের পায়ে ধরে বলছি। এদেশের বড় হুজুরকে দিয়ে মিথ্যা বলিয়ে আমাদের মাথাকে জাতির সামনে, গোটা উম্মাহর সামনে আর ছোট করবেন না প্লীজ!!!